ভিটামিন 'সি' সমৃদ্ধ একটি রসালো ফল হচ্ছে মাল্টা। ফলটি একসময় বাংলাদেশর পাহাড়ি অঞ্চলে চাষ হলেও এখন আর পাহাড়ে সীমাবদ্ধ নেই। দেশের সমতল ভূমিতেও মাল্টার চাষ করে ইতোমধ্যে সফলতা পেতে শুরু করেছেন কৃষকরা। তেমনি মাল্টা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সাতুতী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সহকারি কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হাজী আবুল মুনসুর। যা উৎসাহিত করছে স্থানীয় কৃষকদের।
আবুল মুনসুর চাকুরি জীবনে সফলতার কারণে তিনি কৃষি বিভাগ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ পুরস্কারসহ পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা। চাকুরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন মাল্টা বাগান করবেন। ২০১৭ সনের জুন মাসে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ৯০টি বারি জাত-১ মাল্টার চারা সংগ্রহ করে ৩৩ শতক সমতল জমিতে তিনি তা রোপন করেন। রোপনের দুই বছরের মাথায় গাছে মুকুল আসে ও তারপর আগস্ট মাসে আশানুরূপ মাল্টার ফলন হয়। বর্তমানে আবুল মুনসুরের বাগানে প্রতি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে মাল্টা। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এসব গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা হবে।
আবুল মুনসুর জানান, কৃষি পেশাকে তিনি মনেপ্রাণে ভালবাসেন। চাকুরি জীবনে তিনি পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে উন্নত জাতের কৃষিপণ্য উৎপাদনের মধ্য দিয়ে স্থানীয় অনেক কৃষকের ভাগ্যের উন্নতি ঘটিয়েছেন। তাই চাকুরি জীবন শেষে নিজ গ্রামের জমিতে উন্নত জাতের বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন ও ফলের বাগান করে সফলতার পাশাপাশি অর্থ উপার্জন করে যাচ্ছেন তিনি। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগও হয়েছে স্থানীয় কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় পরীক্ষামূলকভাবে মাল্টার বাগান করে সফলতা পেয়েছেন তিনি। বর্তমানে তার বাগানে প্রতিটি গাছে গড়ে ৬০-৬৫টি মাল্টা ধরেছে। আগামি মৌসুমে দ্বিগুন ফলন হবে বলে আশাবাদী তিনি।
তিনি বলেন, মাল্টা গাছ দীর্ঘ বছর ধরে ফল দিয়ে থাকে। প্রতি মৌসুমে পর্যায়ক্রমে মাল্টা গাছে ফলন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এজন্য সঠিকভাবে গাছের পরিচর্চা ও যতœ নিতে হয়। মাল্টা বাগানে মাল্টা চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ করা যায়। সাথী ফসল হিসেবে তিনি মাল্টা বাগানে মূলা, বেগুন, পেঁপে ও মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে অর্থ উপার্জন করেছেন। ইতোমধ্যে স্থানীয় পাইকাররা এ বাগানের মাল্টাগুলো এক লক্ষ টাকা দিয়ে কিনে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানান তিনি।
আবুল মুনসুর আরো জানান, তার মাল্টা চাষের সফলতা দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। প্রতিদিন মাল্টা বাগান দেখতে আসা লোকজন তার কাছ থেকে চারা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তাই স্থানীয় লোকজনকে মাল্টা চাষে উৎসাহিত করতে ও তাদের চাহিদা মেটাতে প্রথম পর্যায়ে এক হাজার মাল্টার চারা তৈরীর পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি।
এ ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সুখ রঞ্জন দাস জানান, মাল্টা গাছ রোপনের দুই বছরের মাথায় ফল পাওয়া যায়। সাধারণত জুন-জুলাই মাসে চারা রোপন করতে হয়। প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ১শ গাছ লাগানো যায়। ১ ফুট বাই ১ ফুট গর্ত করে প্রয়োজনীয় সার দিয়ে ১০ দিন ফেলে রেখে গাছ রোপন করতে হয়। প্রথম মৌসুমে ফলন একটু কম হয়। ৫ বছর বয়সী প্রতিটি গাছ থেকে বছরে গড়ে ৩শ থেকে ৪শ'টি মাল্টা পাওয়া যায়। মাল্টা গাছে মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসে এবং অক্টোবর-নভেম্বরে ফল সংগ্রহ করা হয়।
ইতিমধ্যে আবুল মনসুরের মাল্টা বাগান পরিদর্শন করেছেন গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা করিম। পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, আবুল মুনসুরের মাল্টা বাগান দেখে খুব মুগ্ধ ও খুশি হয়েছেন। তার উদ্যোগ স্থানীয় কৃষকদের মাঝে মাল্টা চাষের উৎসাহ যোগাবে।
গৌরীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আবুল মুনসুর একজন সফল কৃষি কর্মকর্তা। চাকুরি জীবন শেষে তিনি নিজ এলাকায় উচ্চ ফলনশীল কৃষি পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি ফলের বাগান করে সফলতা অর্জন করেছেন। তার মাল্টা বাগান সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। আবুল মুনসুরের উদ্যোগ স্থানীয় কৃষকদের মাঝে প্রেরণা যোগাবে।
তিনি আরো বলেন মাল্টা একটি অর্থকরী ফসল। এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল। এতে এটি চাষে এলাকার পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি চাষীরা আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হবেন। তবে এ বাগান করতে হলে কৃষককে খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যাতে কোন রকমে ভাইরাস লাগতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভাইরাস লাগলে গাছের পাতা পোকায় নষ্ট করে দেয় এবং পাতা কুঁকড়ে-মুকড়ে যায়।