আশঙ্কা করা হয়েছিল ঈদ করতে ঢাকা থেকে লোকজন বাড়িতে এলে পাবনার বেড়া উপজেলায় ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে। অবশেষে সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। বেড়ায় ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগী দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। গত ৫ আগস্ট থেকে গতকাল (২৩ আগস্ট) পর্যন্ত ১৮ দিনে শুধু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই ৪৯ জন ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। উপজেলার বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেগুলোতে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা এই হিসাবের বাইরে। ঈদ করতে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসা অনেকেই ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহন করে আনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এমন বেড়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুজন রোগীকে প্রথম ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়। গতকাল (২৩ আগস্ট) পর্যন্ত এই সংখ্যা বেড়ে ৪৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়াও অনেকেই উপজেলার বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এমন রোগীদের অনেকেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না গিয়ে বাইরের চিকিৎসাকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। ফলে বেড়ায় সব মিলিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে চিকিৎসকদের ধারণা।
চিকিৎসকেরা জানান, ৫ আগস্টের আগে এই রোগে আক্রান্ত রোগী উপজেলায় প্রায় ছিল না বললেই চলে। শুধু একজন রোগী জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। তবে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর ওই রোগী সেই দিনই উন্নততর চিকিৎসা নিতে বগুড়া চলে যান।
এর ফলে চিকিৎসক ও আক্রান্ত রোগীরা ধারণা করছেন, ঈদ উপলক্ষে ঢাকা থেকে বেড়ায় লোকজনের আসা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উপজেলায় ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকা থেকে চলতি মাসের একেবারে গোড়ার দিকে লোকজনের বেড়ায় আসা শুরু হয়ে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। বেড়ায় যাঁরা এসেছেন তাঁদের অনেকেই ডেঙ্গু জ¦রের ভাইরাস বহন করে এনেছেন। প্রথমে ভাইরাস বহনকারী ব্যক্তিরা এই জ¦রে আক্রান্ত হয়েছেন, এর পরে তাঁদের থেকে স্থানীয়রা (যাঁরা সম্প্রতি ঢাকা যাননি) এতে আক্রান্ত হয়েছেন।
বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মিলন মাহমুদ বলেন, ‘আমরা যা আশঙ্কা করেছিলাম তা-ই সত্যি হয়েছে। অর্থাৎ ঈদ উপলক্ষে ঢাকার লোকজন বেড়ায় আসার পর থেকেই এই রোগটি এখানে দ্রুত শনাক্ত হতে শুরু করেছে। ৫ আগস্টের পর সপ্তাহ খানেক ধরে আমরা যেসব রোগী পেয়েছি তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন ঢাকা থেকে আক্রান্ত হওয়া। কিন্তু ঢাকা যাননি এমন স্থানীয় পর্যায়ের রোগীই বর্তমানে বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে ডেঙ্গু নিয়ে উপজেলাবাসীর মধ্যে তীব্র আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যে কোনো ধরনের জ¦রে আক্রান্ত হলেই লোকজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য ছুটে আসছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ঈদের আগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু শনাক্তকরণের উপকরণ ছিল না। কিছু অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার পর ১৫ আগস্ট ৫০ টি শনাক্তকরণ কিটস স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ সংগ্রহ করেছিল। ইতিমধ্যেই শনাক্তকরণের কাজে অর্ধেকের বেশি কিটস ব্যবহৃত হয়েছে।
মিলন মাহমুদ আরও জানান, যেভাবে সবাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য চাপ দিচ্ছেন তাতে সবার পরীক্ষা করলে এক ঘন্টার মধ্যে সব কিটস শেষ হয়ে যাবে। আসলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুযায়ী চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ডেঙ্গু জ¦রের পরীক্ষা করতে হবে। এ ব্যাপারে লোকজনের সচেতনতা ও সহায়তা কামনা করি।
এদিকে উপজেলার বিভিন্ন খাল, ডোবা ও ঝোপঝাড়গুলো পরিস্কার করার কার্যকরী উদ্যোগ এখনও নেওয়া হচ্ছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে ফগার মেসিনের মাধ্যমে মশা নিধন অভিযান চালানো হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন মশা ও ডেঙ্গুজ¦রের ব্যাপারে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে তাদের কর্মকা- সীমাবদ্ধ রেখেছে।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে উপজেলাবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আমরা মশার উৎসস্থল ধ্বংসের জন্যও বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। তবে এ ক্ষেত্রে এলাকাবাসীরও সচেতন হওয়া দরকার এবং নিজ আঙিনা পরিস্কার রাখা দরকার।