ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ইউপি সদস্য মোস্তাকিম হত্যা মামলার প্রধান আসামী স্বপন মিয়া (৩২) ও তার লোকজন জামিনে এসে এ মামলার বাদী ও সাক্ষীদের মৃত্যুর হুমকীসহ চাঁদা দাবি করছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। ‘এক খুনে সাজা ফাঁসি, দশ খুনেও ফাঁসি’ এই বলে স্বপন বাহিনী এলাকায় আতংক সৃষ্টি করছেন।
উল্লেখ্য পূর্ব শত্রুতার জেরে এ উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোঃ মোস্তাকিমকে নিজ স্বল্প পশ্চিমপাড়া গ্রামে ২০১৮ সনের ৬ ডিসেম্বর প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও পিঠিয়ে রক্তাত্ব জখম করেন প্রতিপক্ষ বালুচড়া গ্রামের ইউপি সদস্য স্বপন মিয়া ও তার লোকজন। পরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মোস্তাকিম। এ ঘটনায় স্বপনকে প্রধান আসামী করে ৮ জনের নাম উল্লেখ্য করে গৌরীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী আসমা আক্তার (২৬)। গৌরীপুর থানার মামলা নং-৯/৩০৪ তাং-০৭/১২/১৮ ইং।
নিহত মোস্তাকিমের বড় ভাই আবুল বাশার জানান, স্বপন ও তার বাবা আবু সাইদ ওরফে শাহেদ আলী এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। চাঁদাবাজি, লুটতরাজ ও অসামাজিক কর্মকান্ডের জন্য তারা এলাকায় একটি নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলেন। যা স্বপন-শাহেদ বাহিনী নামে পরিচিত। স্থানীয় লোকজন এদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পেতনা। একমাত্র তার ভাই মোস্তাকিম মেম্বার স্বপন-সাহেদ বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন। এ কারনে মোস্তাকিমকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে তারা।
তিনি আরো জানান, স্বপন ও তার বাবা শাহেদ আলীর বিরুদ্ধে গৌরীপুর থানায় দায়েরকৃত ১৩টি মামলা চলমান রয়েছে। সম্প্রতি হাই কোর্ট থেকে হত্যা মামলার জামিনে এসে স্বপন ও তার লোকজন এলাকায় আগের মত ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। হত্যা মামলার বাদি ও সাক্ষীর নিকট চাঁদা দাবিসহ মামলা প্রত্যাহারের জন্য অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন তারা।
গত ১১ জুন স্বপন ও তার লোকজন আবুল বাশারের নিকট দুই লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেয়ায় এদিন রাতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে তারা। এসময় হত্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য তাকে মৃত্যুর হুমকী দিয়ে স্বপন বলেন, ‘এক খুনে সাজা ফাঁসি, দশ খুনেও ফাঁসি’। এ ঘটনায় আবুল বাশার বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। গৌরীপুর থানার মামলা নং-৩০/১৬০ তাং-২৩/০৬/১৯। স্বপন-সাহেদ বাহিনীর অব্যাহত হুমকীর মুখে বর্তমানে আতংকে দিন কাটছে তাদের।
হত্যা মামলার অন্য সাক্ষী স্বল্প পশ্চিমপাড়া গ্রামের রবি মিয়া জানান, স্বপন-সাহেদ বাহিনীর লোকজন তাকেসহ অন্যান্য সাক্ষীদেরকে মৃত্যুর হুমকী দিয়ে আসছেন। বর্তমানে তারা থানায় অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য স্বপন মিয়া জানান, হাই কোর্ট থেকে হত্যা মামলায় জামিন নেয়ার পর অদ্যবধি পর্যন্ত তিনি এলাকায় আসেননি। তিনি কারো কাছে চাঁদা দাবি বা মামলা প্রত্যাহারের জন্য কাউকে মৃত্যুর হুমকী দেননি। প্রতিপক্ষের লোকজন তার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করেছেন।
গৌরীপুর থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম মাওলা জানান, স্বপন মিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে গৌরীপুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। হত্যা মামলাটি ময়মনসিংহ সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। সবকটি মামলায় তিনি জামিনে আছেন।
তিনি আরো জানান, মোস্তাকিম মেম্বার হত্যা মামলায় আদালত থেকে জামিনে আসার পর চাঁদাবাজি ও বাড়ি-ঘর ভাংচুরের অভিযোগে স্বপন এবং তার লোকজনের বিরুদ্ধে জুন মাসে এ থানায় আরো একটি মামলা হয়। এ মামলাও তিনি আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বপন ও তার লোকজন বর্তমানে যদি কাউকে হুমকী বা কারো কাছে চাঁদা দাবি করে থাকে তাহলে থানায় অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।