বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে পুলিশ সদস্যরা। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যদের অপরাধ ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশের অপরাধ প্রবণতা বিষয়ে নীতিনিধারকদের বিশেষ সভায়ও আলোচনা হয়েছে। অপরাধ কমিয়ে আনতে পুলিশ সুপারদের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকা মহানগরীর অর্ধশত থানায় চলছে গোপন নজরদারি। যেসব থানার পুলিশ সদস্যের অতীত রেকর্ড ভালো নয়, সেসব থানায় বেশি নজরদারি চালানো হচ্ছে। যেসব এলাকায় পুলিশের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেশি, এর ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে তালিকা। নজরদারির পাশাপাশি ডিএমপির একই স্থানে তিন বছরের অধিক সময় ধরে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের শিগগিরই তালিকা করা হবে। কাজে গতিশীলতা আনতে এবং প্রকৃত জনসেবা নিশ্চিত করতেই এ তালিকা হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিভিন্ন অপরাধজনিত কারণে বিগত ২০১৮ সালে ১৩ হাজার ৬৫৫ জনকে লঘুদন্ড, ৬০৪ জনকে গুরুদন্ড, ৬৯ জন চাকরিচ্যুত এবং ৫ জন পুলিশ সদস্যকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তার আগে ২০১৫ সালে ১০ হাজার ৩৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৭৮ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ওই বছর প্রায় ৩০ হাজার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছিল। ২০১৬ সালে ১১ হাজার জনের বিভিন্ন ধরনের সাজা হলেও ফৌজদারি আইনে তেমন মামলা হয়নি। ২০১৭ সালে এক হাজার ৫১২ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর পুলিশ ইতিমধ্যে পাওনা টাকা আদায় কিংবা কারো পক্ষে জমি-ফ্ল্যাট দখল বা বেদখলে কোনো পুলিশ সদস্য জড়ালে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এগুলো দেওয়ানি আদালতের বিচার্য বিষয়। তারপরও ডিএমপির কিছু সদস্য দেওয়ানি আদালতের বিচার্য বিবাদীয় পক্ষের অর্থ আদায়, জমি, প্লট, ফ্ল্যাট কিংবা বাড়ির দখল বুঝিয়ে দেয়া বা উচ্ছেদ করার বিষয়ে নিজেদের জড়াচ্ছে। এমন কর্মকান্ডে পুলিশ সদস্যদের জড়িত না হওয়ার জন্য অফিস আদেশের মাধ্যমে ডিএমপিতে কর্মরত সব পুলিশ সদস্যকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ডিসি, এডিসি ও এসিরা নিজ অধিক্ষেত্রে (ইউনিট) কর্মরত কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা যাতে এ ধরনের কর্মকান্ডে জড়িত না হন, সে বিষয়ে নিবিড়ভাবে তদারকির মাধ্যমে নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি যদি কোনো পুলিশ সদস্যকে কোনো ব্যক্তি বা মহল এ ধরনের কর্মকান্ডে নিয়োজিত হওয়ার নির্দেশ দেন বা চাপ প্রয়োগ করেন, তা সরাসরি ডিএমপি কমিশনারকে বা নিজ নিজ ইউনিটের প্রধানকে অবহিত করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনের পর দিন একই কর্মস্থলে রাখা হলে পুলিশ সদস্যদের অপরাধ প্রবণতা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে পদোন্নতি ও বদলির বিষয়টি ছাড়াও পুলিশ সদস্যদের কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হলে পুলিশের অপরাধের হার কমবে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে বিকল্প তৈরির আগ পর্যন্ত কিছু সময়ের জন্য বিশেষায়িত ইউনিট কিংবা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এ নিয়মের বাইরে রাখা যেতে পারে।
অন্যদিকে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এইচআরএম) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, বাহিনীর কেউ অপরাধ করলে তার ছাড় নেই। এ ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে পুলিশ সদর দফতর। কারো অপরাধের দায় বাহিনী নেবে না।