নাগরিকদের উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র এনআইডি বা স্মার্টকার্ড বিতরণের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক বছরের মধ্যে স্মার্টকার্ড বিতরণের কাজ শেষ করার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তিন ভাগের এক ভাগ কার্ডই বিতরণ করতে পারেনি ইসি। স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরুর পর তিন বছরে মাত্র ৩০ শতাংশ ভোটারের হাতে স্মার্ট কার্ড তুলে দিতে পেরেছে নির্বাচন কমিশন। অর্থাৎ বছরে গড়ে মাত্র ১০ শতাংশ করে কার্ড বিতরণ করতে পেরেছে ইসি। সে হিসেবে কাজের গতি এভাবে চলতে থাকলে স্মার্টকার্ড শতভাগ বিতরণ করতে ১০ বছর সময় লেগে যাবে। একইসাথে প্রতিবছর নতুন নতুন ভোটার যোগ হওয়ায় চাপ আরও বেড়ে যাবে এবং স্মার্টকার্ড বিতরণ একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় পরিণত হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। সূত্রমতে, নয় কোটি নাগরিককে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিস’ (আইডিইএ) প্রকল্পের আওতায় এ পরিচয়পত্র মুদ্রণের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালের অক্টোবরে। এরপর ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর শুরু হয় বিতরণ। গত জুলাইয়ে স্মার্ট কার্ড বিতরণ সংক্রান্ত সর্বশেষ সভার কাযবিবরণীতে জানানো হয়, এ পর্যন্ত ৪ কোটি ৬০ লাখ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। তার মধ্যে ৩ কোটি ৩৩ লাখ পরিচয়পত্র নাগরিকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন অফিসে অনেক কার্ড রয়ে গেছে, যেগুলো বিতরণ করা হয়নি বা নাগরিকরা নিতে আসেননি। এ ছাড়া নাগরিকের তথ্য না মেলায় অনেক স্মার্ট কার্ড মুদ্রণ সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, আইডিইএ প্রকল্পের আওতায় ২০১১ সালের জুলাইয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার চুক্তি করেছিল ইসি। এরপর ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান অবার্থুর টেকনোলজিসের সঙ্গে ৮০০ কোটি টাকায় স্মার্টকার্ড উৎপাদন ও বিতরণের চুক্তি হয়। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের জুনে। পরে মেয়াদ ১৮ মাস বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু ফ্রান্সের ওই কোম্পানির কাজে দেরি দেখে অপেশাদারিত্বের অভিযোগ এনে ২০১৭ সালে ইসি তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। ফরাসি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল হওয়ার পর প্রকল্পে অর্থায়নে অনাগ্রহ দেখায় বিশ্ব ব্যাংক। সরকারি অর্থায়নে এখন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি। এদিকে, আইডিইএ প্রকল্পের বাইরেও প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষ ভোটার তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন। প্রকল্পের শুরুতে নয় কোটি ভোটারকে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার লক্ষ্য থাকলেও ভোটার সংখ্যা এখন বেড়ে হয়েছে ১০ কোটি ৪২ লাখের বেশি। হালনাগাদে ২০২২ সালের মধ্যে আরও ৮০ লাখ ভোটার যোগ হবে তালিকায়। এ অবস্থায় নতুন ভোটারদের কার্ড পেতে আরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। ইসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিলম্ব হওয়ায় স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে যে ২৫ ধরনের সেবা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল সেসব সুবিধা নতুন ভোটাররা পাবেন না। কারণ সেবাদানকারী সংস্থাগুলোও এ কার্ডের ভিত্তিতে সেবা কার্যক্রম শুরু করতে পারবে না। ইসির কর্মকর্তারা জানান, প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সময়মতো কার্ড হস্তান্তর করতে পারেনি বলেই এ বিলম্ব হয়েছে। তবে কার্ড বিতরণ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া নতুন ভোটারদের স্মার্টকার্ড দেওয়ার জন্য এবং এ প্রক্রিয়া চলমান রাখার জন্য নতুন আরেকটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে ইসি। সরকার ওই প্রকল্পে অর্থ জোগান দেবে। এছাড়াও যেসব নাগরিকের ভোটার তথ্য পুরোপুরি পাওয়া যায়নি বা ঠিকানা মেলেনি, তাদের স্মার্ট কার্ড মুদ্রণের কাজটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা সম্ভব হয়নি, সেগুলো পর্যালোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আলাদা বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান। কর্মকর্তাদের মতে, প্রথম দিকে কাজটি করতে গিয়ে সমস্যা হলেও এখন তাঁরা সেটি কাটিয়ে উঠেছেন। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে, মুদ্রণ কাজ এগিয়ে রাখা হচ্ছে। বিতরণ না হওয়া কার্ড দ্রুতই ক্র্যাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে উপজেলা-সিটি এলাকার নাগরিকদের হাতে পৌঁছানো হবে।