দুই কোটিরও বেশি মানুষের বাসস্থান রাজধানীর সড়কগুলো দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ চলাচল করেন। এসব সড়কে সমস্যা-বিশৃঙ্খলা নতুন কোনও বিষয় নয়। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এসব সমস্যা মুখ বুঁজে মেনে নিতে হচ্ছে।
রাজধানীর সড়কে নৈরাজ্য বন্ধ নিয়ে কর্তৃপক্ষের যে পদক্ষেপ নেই -তা বলা যায় না। তবে বেশিরভাগ পদক্ষেপই সফলতার মুখ দেখছে না। ঢাকার সড়ক ও পরিবহন খাতে গত এক দশকে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রকল্প নিয়েছে সরকার। এরপরও রাজধানী শহরে যানবাহন চলছে হাতের ইশারায়, সংকেতবাতি প্রায় অকার্যকর। নাজুক গণপরিবহনব্যবস্থায় নগরবাসীর দুর্ভোগের অন্ত নেই। ঢাকা মানেই যানজট, ঢাকা মানেই সড়কে মৃত্যু, দূষণ আর বেহাল সড়কের শহর।
২০০৫ সালে ঢাকার জন্য ২০ বছরের কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) তৈরি করা হয়, যা ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু পরিকল্পনা অনুসারে অনেক কাজই হয়নি। এরপর ২০১৫ সালে সংশোধিত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) তৈরি করা হয়, যার মেয়াদ ২০৩৫ সাল পর্যন্ত। ঢাকায় যত প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে ও হবে, এর সবই এই পরিকল্পনার আওতায় হওয়ার কথা। আরএসটিপিতে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল যানবাহন পরিচালনা নিশ্চিত করা এবং বাসসেবার উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা বাদ দিয়ে সরকার বিপুল ব্যয়ে উড়ালসড়কের মতো বড় প্রকল্পকে গুরুত্ব দিয়েছে, যার কার্যকারিতা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ।
এছাড়া রাজধানীর সড়কে প্রাণহানি নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব মৃত্যুর কারণ বহু মালিকানাভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থা। পরিবহন মালিকদের এতটাই দাপট যে বারবার চেষ্টা করেও সরকার তাদের সাথে সমঝোতায় আসতে পারছে না। এর অন্যতম প্রধান কারণ পরিবহন সমিতির নেতাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা। ঢাকায় চলচলকারী বাসগুলোকে ছয়-সাতটি কোম্পানির আওতায় এনে শৃঙ্খলা ফেরানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন একজন মেয়র। কিন্তু পরিবহন মালিকদের সাথে বারবার বৈঠক করেও সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনও সুরাহা হয়নি। মেয়র বলেছেন প্রক্রিয়াগুলো শেষ করে একটি নিরাপদ ও নাগরিকসুবিধাযুক্ত পরিবহনব্যাবস্থা গড়তে আরও দু’বছর অপেক্ষা করতে হবে।
কিন্তু বাংলাদেশের সংষ্কৃতি থেকে আমরা অপেক্ষার ফলের স্বাদ কেমন হবে তা আগের থেকেই বুঝতে পারি। উল্লিখিত এসটিপির মেয়াদ থেকে সংশোধিত আরএসটিপির মেয়াদ আরও দশ বছর বৃদ্ধি থেকেই বোঝা যায়, এখানে পরিকল্পনা গ্রহণে দুরদর্শীতার অভাব রয়েছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মযজ্ঞে সৃষ্ট ভোগান্তি মানুষ মেনে নিচ্ছে, একটার পর একটা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু এগুলোকে দীর্ঘায়িত করে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যাহত করার উদ্দেশ্য কী?
রাজধানীবাসীকে ভোগান্তি নামক দৈনন্দিন পেষণ থেকে মুক্তি দিন। উন্নত জীবনের আশায় এখানে আসা মানুষগুলো এবার একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে চায়। রাজধানীকে যানমুক্ত করতে, সড়কগুলোকে চলাচলের উপযোগী ও সুশৃঙ্খল করতে দুরদর্শীতাসম্পন্ন নীতিমালা করুন। একবার এটা, আকেবার ওটা -এরকম করে সমস্যার সমাধান করা কোনদিনও সম্ভব হবে না।