দেশের বিপুল জনশক্তিকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে কারিগরি শিক্ষায় বিশেষ জোর দিচ্ছে সরকার। উদ্দেশ্য, লেখাপড়া শেষ করে চাকরি না পেলেও দক্ষতা অনুযায়ী নিজের কর্মসংস্থান যেন নিজেই করতে পারে। সরকারের এই উদ্যোগ অনেক অনেক প্রশংসার দাবী রাখে। ২০০৯ সালে কারিগরি শিক্ষার হার ১ শতাংশ থাকলেও গত ১০ বছরের ব্যবধানে এ হার ১৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। কর্মমুখী শিক্ষিতদের সহজেই কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়, সাধারণ মানুষও এখন তা বুঝতে পারছে। বিশ্বের যত উন্নয়নশীল দেশ রয়েছে তারা কিন্তু গতানুগতিক শিক্ষা থেকে বেরিয়ে, কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব ও এর উপর ভিত্তি করেই উন্নত ও উন্নয়নের স্বর্ণশিখরে পৌঁছেছে।
সূত্র জানায়, ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার হার ২০ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। উন্নত বিশ্বের কাতারে দাঁড়াতে হলে এ হার অন্তত ৭০ শতাংশে উন্নীত করা জরুরি। গত ৫ বছর ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঁচ বছর আগে সোয়া ৯ লাখ শিক্ষার্থী থাকলেও বর্তমানে তা সাড়ে ১২ লাখ ছাড়িয়েছে।
আমরা মধ্যম আয়ের দেশ, উন্নত দেশ ও ডিজিটাল ডিজিটাল বলে গলা ফাটাই। অথচ একটি সেলাইয়ের সুই, ব্লেড, চাকু থেকে সবরকম খেলনা ও প্রশাধনী ক্রয়ে বিদেশের উপর নির্ভরশীল। ইলেকট্রনিক্স ও ম্যাসিনারিজ পণ্য বলতে আমরা ভারত, চীন, কোরিয়া ও মালয়েশিয়াকেই বুঝি। আমাদের বাজারও ওদের দখলে। কারণ তারা তত্ত্বগত শিক্ষার চেয়ে ব্যবহারিক ও তথ্য প্রযুক্তির শিক্ষার ক্ষেত্রকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বাজার চাহিদার আলোকে নয়। যার ফলে কিছু সেক্টর তৈরি হচ্ছে লাখ-লাখ শিক্ষিত বেকার ও কিছু সেক্টর দক্ষ জনবলের অভাবে ব্যহত হচ্ছে উন্নয়ন, নির্ভর করতে হচ্ছে বিদেশি জনবলের উপর। আমাদের শিল্প-কারখানা, গার্মেন্ট সেক্টর থেকে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বাইরের এক্সপার্টদের দিয়ে দিতে হয়।
দেশের বেসরকারি খাত বড় হওয়ায় দক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। বিদেশেও দক্ষ কর্মীর চাহিদা বেশি। বর্তমানে সারা দেশে ৮ হাজার ৬৭৫টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এগুলোতে বিভিন্ন ট্রেডে কারিগরি শিক্ষা দেয়া হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আরও ২৩ জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এটা সরকারের সময়োপযোগী ভালো সিদ্ধান্ত। দেশের বিশাল সংখ্যক কর্মমুখী জনশক্তিকে বাজারের চাহিদার আলোকে শিক্ষায় শিক্ষিত করা, ভাষাগত এবং কারিগরি দক্ষতা দ্বারা যদি একটি দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করা যায়, তবেই বাংলাদেশকে ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রুপান্তর করা সম্ভব।