যুগের পর যুগ বসবাস করেও মানুষগুলো এখন জানতে পারছে তাদের কোন রাষ্ট্র নেই। ভারতের বিজেপি সরকারের মানবাধীকার পরিপন্থি সিদ্ধান্তের বলি হয়ে লাখো মানুষকে আশ্রয় নিতে হবে বন্দিশিবিরে! নিজের জন্মভূমি, জায়গা-জমিন ও ঘর-বাড়ি রেখে যেতে হবে বন্দিশিবিরে! অর্ধশতাব্দী বা তারও বেশী সময় ধরে যারা বসবাস করছে, তাদের বিদেশী আখ্যা দিচ্ছে ক্ষমতাসীন ভারতীয় সরকার।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের আসামে চূড়ান্ত নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) খেলায় রাজনৈতিক ফায়দা লুটা যত সহজ হবে; বিপরীতে দেশের অখ-তা বজায় রাখা ততই কঠিন হবে। সোভিয়েতে ইউনিয়নের মত ভারতের পেট থেকে নতুন রাষ্ট্রের জন্ম নেওয়া এখন সময়ের ব্যাপার কী? কেননা, কারো পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায়, তখন আর কিছুই করার থাকে না। ঘুরি-ফিরে হলেও তাকে বাঁচার জন্য লড়তে হবে। হয়তো সে বাঁচতে পারবে না! কিন্তু তার উত্তরসূরিরা স্বাধীনতার সুফল নিয়ে বেঁচে থাকবে। এটাই কিন্তু তাবৎ বিশ্বের ইতিহাস।
জানা যায়, আসামে এনআরসি থেকে বাদ পড়া মানুষের জন্য বন্দিশিবির নির্মাণ করা হচ্ছে। একটি বন্দিশিবির নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে সাতটি ফুটবল মাঠের সমান জায়গার ঘনো বন সাফ করে ফেলা হয়েছে। আসামের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, ১০০০ কোটি রুপি ব্যায়ে গোয়ালপাড়ার কাছাকাছি নির্মাণ করা এই বন্দিশিবিরসহ মোট ১০টি বন্দিশিবির নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। গত মে মাসে ৫০ লাখ রুপি খরচে ১টি বন্দিশিবির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেছেন গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত। এছাড়াও ৪৫ কোটি রুপি খরচে গোয়ালপাড়ায়ও একটি বন্দিশিবির নির্মাণ করা হচ্ছে।
বন্দিশিবির নির্মাণের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে রয়টার্স জানায়, শেফালি হাজং নামের এক নির্মাণশ্রমিক জানিয়েছেন, এনআরসিতে তার নাম নেই। প্রায় ১৯ লাখ মানুষের মতো তাকেও এখন নিজের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে না পারলে, নিজের হাতে নির্মাণ করা এই বন্দিশিবিরই হতে পারে তার ভবিষ্যৎ আশ্রয়স্থল। শেফালির মা মালতি হাজংও কাজ করছেন এই প্রকল্পে। কেন এনআরসিতে নাম নেই, সে ব্যাপারে কোনো ধারণা নেই তার। ৩৫ বছর বয়সী আরেক নির্মাণশ্রমিক সরোজিনী হাজং। কেন এখানে কাজ করছেন? জানতে চাইলে সরোজিনীর উত্তর, ‘কী হবে, সে বিষয়ে আমরা জানি না। কিন্তু আমাদের কীই-বা করার আছে? আমাদের টাকার দরকার।’ একবিংশ শতাব্দীর এই বিজ্ঞানের যুগে, মানব সভ্যতার জন্য চরম লজ্জার সাথে অমানবিক বিষয়, যে বন্দিশিবিরে যাদের রাখা হবে, তারাই কিনা নিজ হাতে বন্দিশিবির নির্মাণ করছে। ইতোপূর্বে ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আসামের দুটি কারাগার পরিদর্শন শেষে জানিয়েছিল, সেখানকার বন্দিরা অন্য কারাগারের বন্দিদের মতো ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাটুকুও পাবেন না।