প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলছে খরা। রৌদ্রদগ্ধ খর তাপে চারদিক যেন চি চি করছে। আকাশের পানে বৃষ্টির দেখা নেই। গেল একমাস আগেই অস্বাভাবিক বন্যার পানির পর আবার খরা, এ যেন প্রকৃতির এক টালমাটাল অবস্থা। বন্যার পানি শুকিয়ে যাবার পর প্রায় তিন গুন দামে কৃষকরা রোপা আমনের চারা কিনে জমিতে লাগিয়েছেন। জমির রোপনকৃত চারা কেবল মাত্র গজিয়ে ওঠার সময়। এমন সময়ে উত্তর এলাকার সাঘাটা, ফুলছড়ি ও গোবিন্দগন্জের মাঠে প্রচন্ড খরায় পুড়ছে কৃষকের রোপা আমন। একদিকে গেল বন্যার ক্ষয়ক্ষতি, অপরদিকে অধিক মুল্যে চারা সংগ্রহের পর আমন রোপণ করেও আবাদ না হলে কৃষকের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ফিকে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সাঘাটা উপজেলার বাটি গ্রামের কৃষক ফারুকুল ইসলাম বন্যার পানি নেমে যাবার পর ৫ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান লাগিয়েছেন। খরার কবলে পড়ে আবাদ নিয়ে তিনি এখন চিন্তিত। শ্যালো চালিত পাম্প দিয়ে সেচ দিয়েও তেমন কাজ হচ্ছেনা বলে জানান ওই কৃষক। যেভাবে শ্যালো মেশিন দ্বারা আমনের জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে, তাতে খরচের টাকা তো উঠবেই না-বরং লোকসান গুনতে হবে বলে জানালেন, একই গ্রামের কৃষক ইউনুছ আলী। বোনারপাড়া, কামালেরপাড়া, পদুমশহর, ভরতখালী, কচুয়া, রামচন্দ্রপুর, হরিরামপুর, সোনাইডাঙ্গা ও তেতুলতলি এলাকার কৃষকরা জানান, বোরোর দাম কম পাওয়ায় এবার আমন ধান রোপণে অধিক মনযোগী হন তারা। কিন্তু বীজতলা নষ্ট হওয়ায় আমন রোপণে বেগ পেতে হয়েছে তাদের। অধিক চরা দামে চারা কিনতে হয়েছে কৃষকদের। সাঘাটার পাশ^বর্তি গোবিন্দগন্জ উপজেলার সোনাইডাঙ্গা গ্রামের কৃষক ওয়াহেদুল ইসলাম জানান, ধারদেনা করে চারা কিনে পাঁচ বিঘা জমিতে রোপা আমন লাগিয়ে এখন বিপদে পড়েছি। বৃষ্টির জন্য চেয়ে থেকে কোন লাভ হচ্ছে না। ঘন্টায় ১০০-১২০ টাকা খরচ করে সেচ দিতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। বন্যার পানিতে চারা নষ্ট হওয়ায় পর এক বিঘা জমিতে আমন রোপণ করে খরার কারণে এথন বেকায়দায় পড়েছি বলে জানালেন, পদুমশহর ইউনিয়নের কৃষক মুকুল মিয়া। সাঘাটা উপজেলা কৃষি আফিসার একেএম মুবিনুজ্জামান চৌধুরি জানান, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের নানা ভাবে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আমন চাষাবাদে করণীয় বিষয়ে দিক নির্দেশণামুলক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপÍরের উপ-পরিচালক ড. ফেরদৌস জানান, সাম্প্রতিক বন্যায় জেলার মোট ৭ হাজার ৫২০ হেক্টর আমনের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। এক লাখ ২৩ হাজার ৬৭ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে অনেক স্থানে পানি শুকিয়ে না যাওয়ায় এ লক্ষমাত্রা পুরণ সম্ভব হবেনা। বগুড়া আন্চলিক আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ সজিব জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। যেকোন সময় উত্তরের জেলা গুলোতে বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করেছেন তিনি।