শব্দ দূষণ, বায়ূ দূষণ, নিষিদ্ধ পলিথিন, ডেঙ্গুরোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে শেরপুরে মতবিনিময় সভা হয়েছে। বুধবার (১১ সেপ্টম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন ও নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
সভায় জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব প্রধান অতিথি এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. বিল্লাল হাসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এতে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ.বি.এম. এহছানুল মামুন। জনউদ্যোগ আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় এতে মুলপ্রবন্ধ পাঠ করেন সাংবাদিক হাকিম বাবুল।
মুলপ্রবন্ধে তিনি বলেন, দেশে প্রতিনিয়ত যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মোটর সাইকেল-সিএনজি, ইজিবাইকের সংখ্যা। অবকাঠামোগত নির্মাণ চলছে দেশজুড়ে। এসব কারণে শব্দ ও বায়ূ দূষণের মাত্রা বাড়ছে। শব্দ দূষণের কারণে দিন দিন বধিরের সংখ্যা বাড়ছে। মানুষের হৃৎকম্প বেড়েছে। উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব হয়-এমন রোগীর সংখ্যাও আশংকাজনক হারে বাড়ছে। বায়ূ দূষণের কারণে অ্যাজমা, শ^াসকষ্ট সহ নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে।
শেরপুরেও এখন শব্দ দূষণের মাত্রা নির্ধারিত সীমার প্রায় দ্বিগুন হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটির পক্ষ থেকে ১৩ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এসব প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে-প্রচার মাইকের যথেচ্ছ প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করতে হবে। স্থানীয়ভাবে মাইক প্রচারের ক্ষেত্রে শব্দযন্ত্রের মাত্রা বা ডেসিবল নির্দিষ্ট করসহ সময় নির্ধারিণ ও সুনির্দিষ্ট গাইড লাইন প্রণয়নের দাবী জানানো হয়েছে। এমনকি মৃত্যু কিংবা শোক সংবাদের মাইকিংও রাত ১২ টার পর থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সভা-সমাবেশ, ওয়াজ মাহফিল, বয়ান, হিন্দুদের পূজা, কীর্তন সহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত মাইক এবং সাউন্ড সিস্টেম অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে লাগানো কিংবা দূরবর্তী স্থানে লাগানো বা স্থাপন বন্ধ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বন-বনানী, পাহাড়, প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাস নিশ্চিত করতে গজনী অবকাশ, মধুটিলা ইকোপার্ক, পানিহাতা, রাজার পাহাড়, রাবার বাগান, শালবাগান এলাকা সহ পর্যটন স্পট কিংবা বিনোদন কেন্দ্রগুলোকে ‘সাইলেন্ট জোন’ ঘোষণা করে সেখানে মাইক-হর্ণ ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবী করা হয়েছে। নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত মিকচার মেশিন এবং খোয়া ভাঙ্গা মেশিনের উচ্চ শব্দ এবং ধুলা পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে। এসবের শব্দ দূষণ ও বায়ূ দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিকল্প চিন্তা করতে হবে। বায়ূ দূষণ কমাতে সড়ক কিংবা নির্মাণ কাজের দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সড়ক এবং নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে হবে। যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপন এবং জিগজ্যাগ প্রযুক্তি বিহীন ইটভাটা বন্ধ করতে হবে। স্বর্ণ কারখানার নির্গত এসিড ধোঁয়া নি:সরণে সঠিক মাপের উচ্চ চিমনির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শব্দ ও বায়ূ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার ওপর জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি শব্দ ও বায়ূ দূষণ রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, পরিবহন মালিক-শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, স্কাউট-গার্লস গাইড, রেডক্রিসেন্ট-বিএনসিসি, সাংবাদিক-পেশাজীবী সহ সকল শ্রেনীপেশার মানুষকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
অনুষ্ঠানের অন্যান্যের মাঝে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক রাসেল মাহমুদ, বিআরটিএ সহকারি প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক রাসেল নোমান, মহিলা পরিষদ সভানেত্রী জয়শ্রী দাস লক্ষ্মী, জেলা মুক্তিডোদ্ধা সাবেক কমান্ডার নুরুল ইসলাম হিরু, মাইক প্রচারক সমিতির সভাপতি নুরুল আমিন, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি আব্দুল হান্নান, ইমাম মাওলানা আবু তালেব মো. সাইফুদ্দিন, কার্টূনিষ্ট সাইফুল ইসলাম শাহীন, পুরোহিত কমল চক্রবর্তী, প্রেসক্লাব সভাপতি মো. শরিফুর রহমান, জুয়েলার্স সমিতির সহ-সভাপতি মো. শাহজাহান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এতে জনপ্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, পরিবহন মালিক-শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, স্কাউট-গার্লস গাইড, রেডক্রিসেন্ট-বিএনসিসি, সাংবাদিক-পেশাজীবীসহ শতাধিক সুধীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।