ময়নাতদন্ত শেষে নিহত গৃহবধুু দীপা রানী রায়ের লাশ তার বাবা-মায়ের কাছে না দিয়ে শ্বশুর বাড়ীর লোকজন তড়িঘড়ি করে শ্মশানে নিয়ে অগ্নি দাহ্য করেছিলেন। এতে শ্বশুর বাড়ীর লোকজন পুনরায় ময়নাতদন্ত থেকে পুরো নিশ্চিত হলেও দীপার বাবা-মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন, ছেড়ে দিয়েছেন নাওয়া-খাওয়া। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার শিয়ালখোয়া গ্রামের গৃহবধু দীপা নিহতের ঘটনাটি চাউর হওয়ায় ওই এলাকায় চলছে চরম উত্তেজনা।
নিহত দীপার স্বামী কালীগঞ্জ উপজেলার শিয়ালখোয়া গ্রামের যাদুরাম রায়ের ছেলে।
”আমরা মেয়ের লাশ চেয়েছিলাম, অনুরোধ করেছিলাম কিন্তু মেয়ের শ্বশুর বাড়ীর লোকজন আমাদের কোন পাত্তাই দেয়নি বরং আমাদের শাসিয়েছিলেন। পুলিশের সাহায্য চেয়েছিলাম সেটিও পাইনি,” অশ্রুকণ্ঠে বললেন দীপার বাবা কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল কমলারটারী গ্রামের কাপড় ব্যবসায়ী কোকিলেশ্বর রায়। তিনি আরো বলেন, “দীপার লাশ কবর দিতে চেয়েছিলাম আমরা কিন্তু তার শ্বশুরবাড়ীর লোকজন পরিকল্পিতভাবে লাশ শ্মশানে দাহ্য করে প্রমানকে চিরতরে লোপাট করেছে, ”তিনি এমনটি জানিয়ে বলেন তাদের মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তার স্বামীসহ পরিবারের লোকজন। পরে তরিঘরি করে লাশ শ্মশানে নিয়ে দাহ্য করেছে।
গেল ৩০ জুলাই সকালে মৃত দীপার স্বামীর বাড়ী উপজেলার শিয়ালখোয়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ গৃহবধু দীপার লাশ ঘরের ভেতর ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। সেদিনই ময়না তদন্তের জন্য লাশ প্রেরন করা হয় লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে।
১৪ আগস্ট গৃহবধু দীপা নিহতের বিষয়টি জেলা আইন শৃঙ্থলা কমিটির সভায় উত্থাপন করা হলে জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক পিপিএম-সেবা বলেন, পুলিশ অবশ্যই সঠিক তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন।
তার আগে ৪ আগস্ট দীপার গ্রামের লোকজন লালমনিরহাট-বুড়িমারী আঞ্চলিক মহাসড়কে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে সঠিক তদন্ত ও খুনিদের গ্রেফতারের দাবীতে মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ করেন।
নিহত দীপার বাবা কোকিলেশ্বর বলেন, দীপার স্বামী প্রকাশ চন্দ্র রায় একজন মাদকাসক্ত হওয়ায় নেশার করার টাকার জন্য দীপাকে প্রায় প্রতিদিন শারীরিক নির্যাতন করতো। ২৯ জুলাই রাতে দীপাকে তার স্বামী বেপরোয়া মারপিট করেছিল আর দীপা সংজ্ঞাজীন হয়ে পড়েছিল। দীপা প্রতিবাদ করেছিল তাই তাকে মরতে হয়েছে। দীপাকে হত্যা করে প্রকাশ ও তার পরিবারের লোকজন দীপার লাশ পরিকিল্পতভাবে ফাসিতে ঝুলিয়ে দেয়।
”আমরা হত্যা মামলা দিয়েছিলাম থানায় কিন্তু কালীগঞ্জ থানার ওসি আমাদের সামনেই মামলার কাগজ ছিড়ে ফেলে দেয় আর জোড়পুর্বক আমার কাছ থেকে অপমৃত্যুর কাগজে স্বাক্ষর নেয়,” এ অভিযোগ দীপার বাবার। “আমরা পুলিশের কোন সহযোগিতা পাইনি বরং পুলিশ হত্যাকারী পরিবারকে সহযোগিতা করছে প্রকাশ্যে,” তিনি অভিযোগ করেন।
দীপার মা প্রতিমা রানী রায় অবিযোগ করে বলেন, তাদের মেয়েকে হত্যা করে দীপার স্বামী প্রকাশ ও তার লোকজন মোটরসাইকেলে চড়ে বাড়ীর সামনে সদম্ভে মোহড়া দিচ্ছে। “আমরা কাঁদছি আর তারা হাসছে,” তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন প্রকাশ একটি রাজননৈতিক দলের ছত্রছায়ায় প্রকাশ্যে নেশা করে ঘুওে বেড়াচ্ছে। আর আমরা মেয়ের মৃত্যুও বিচার চেয়ে পুলিশের দ্বাড়ে দ্বাড়ে ঘুওে বেড়াচ্ছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইতে চাইলে অভিযুক্ত প্রকাশ চন্দ্র রায় বলেন, তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে কিন্তু কেন আত্মহত্যা করেছে এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেননি তিনি। দুই বছর আগে তিনি দীপাকে ভালোবেসে বিয়ে করে সুখে সংসার করে আসছিলেন। কিন্তু হঠাৎই দীপা তাকে ছেড়ে চলে যাবেন এটা ভাবতেই পারেননি বলে জানান প্রকাশ।
গৃহবধু দীপা নিহতের ঘটনায় শিয়ালখোয়ার স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক হিতেন চন্দ্র রায় (৪৬), গ্রাম্য চিকিৎসক বকুলপরী রায় (৫২) ও প্রকাশের নিকট আত্মীয় মিনতি রানীকে পুলিশ থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। পুলিশ তাদেরকে কি জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন এবং কি তথ্য পেয়েছেন তা প্রকাশ করতে নারাজ পুলিশ।
ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার এসআই মাইনুল ইসলাম বলেন, ওসি স্যার তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন আর এটি তদন্তের বিষয় হওয়ায় প্রকাশ করা যাবে না। “আমরা ৩ সেপ্টেম্বর দীপার ভিসারা রিপোর্ট মহাখালিতে পাঠিয়েছি। খুব শিঘ্রই ভিসারা রিপোর্ট পাবো বলে আশা করছি। আর ভিসারা রিপোর্ট পেলেই আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
তবে কালীগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন মামলার কাগজ ছিড়ে ফেলে দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন এ ঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। থানা পুলিশ ঘটনার সঠিক তদন্ত করছেন এবং ভিসারা রিপোর্ট পাওয়ার সাথে সাথেই পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।