জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট আসন সংখ্যা ৩১টি। বৃহস্পতিবার বিকেল পযৃন্ত রোগী ভর্তি ছিলেন ৬২ জন। মাত্রাতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন হাসপাতালের ৪ জন চিকিৎসক ৭ জন নার্স। রোগীরা পাচ্ছেন না প্রয়োজনীয় চিকিৎসা,ঔষধ, খাবার ও পরিচর্যা। নির্মাণের অর্ধযুগ পরেও ৫০ শয্যার নভুন ভবনটি চালু হয়নি। ফলে বাড়ছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
চিকিৎসক, সেবিকা, শয্যা, পানিসহ বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। জেলা শহর সিলেট থেকে ৯১ কি.মি দুরের জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, সেবিকা, শয্যা সংকট থাকার কারণে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জকিগঞ্জবাসী। এ হাসপাতালে পার্শবর্তী উপজেলা কানাইঘাট ও বিয়ানীবাজারের একাংশের লোক সেবা নিতে এসে নানা দুর্ভোগের শিকার হন এখানে। চিকিৎসকের ১৯টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৪জন। ১৩ জন সেবিকার বিপরীতে কর্মরত আছেন ৭ জন। সেবিকার বাকি ৬টি পদ প্রায় ১০ বছর থেকে শুন্য রয়েছে। ফার্মাসিস্টের চারটি পদের সবগুলোই প্রায় ৩ বছর শুন্য। ঝাড়-দারের ৫টি পদের মধ্যে ৩টি পদই শুন্য। ল্যাব নেই ; নেই টেকনিশিয়ানও। বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটের সমস্যাও এখানে প্রকট। ১৯৮১ সালে নির্মিত ৩১ শয্যাবিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি আজও ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়নি। বিগত প্রায় ৭ বছর আগে ১৯ শয্যা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। গত বছর সাবেক অর্থমন্ত্রী সিলেটে বসে তা উদ্বোধনও করেছেন। কিন্তু নতুন পদ সৃষ্টি না হওয়ার কারণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ৫০ শয্যায় উন্নীত হতে পারেনি হাসপাতালটি। হাসপাতালটি ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হলেও প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা থাকে ৫০-৬০ জন। বুধবার সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় নির্ধারিত পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের বাইরে হাসপাতালের বারান্দায় রয়েছেন প্রায় ২৬/২৭ জন রোগী। এর মধ্যে অর্ধেকেই থাকার জন্য পাননি বেড। ফ্লোরেই থাকতে হচ্ছে তাদের। মাত্রাতিরিক্ত রোগীদের শয্যা ও খাবার দিতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। হাসপাতালে র্দীঘদিন পর একটি এ্যাম্বুলেন্স স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রদান করলেও এ্যাম্বুলেন্সটির চালক অসুস্থ হবার কারণে সেটি বন্ধ রয়েছে বর্তমানে। এছাড়াও এ হাসপাতালে বহিবিভাগে প্রতিদিন শতাধিক রোগী সেবা নিতে আসেন কিন্তু হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ থাকে না। ড্রেনেজ সমস্যায় পানি ও মল আটকে থাকে। এতে পরিবেশন দূষণ হয়। প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও রোগীদের বেডের সমস্যা বহু পুরনো। এ উপজেলায় একমাত্র সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়া বেসরকারী পর্যায়ে কোন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি আজও। ফলে আধুনিক চিকিৎসার বিপরীতে হাতুড়ে ডাক্তার, ঝাড়-ফুক, তেলপড়া, পানিপড়াই যেন এ অবহেলিত জনপদের ভরসা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহ আল মেহেদী বলেন, প্রতিদিন গড়ে দুই আড়াইশ রোগী সেবা নিতে আসেন। ভর্তি হচ্ছেন ৬০-৬৫জন রোগী। হাসপাতালের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ১৫টি বেড বাড়ানো হয়েছে। জেলা সদর হতে বহু দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত হওয়ার কারণে রোগীর চাপ থাকে বেশী। কিন্তু জনবল সংকট ও প্রয়োজনীয় শয্যার অভাবে স্থান দিতে আমাদের হিমসিম খেতে হয়। বহুবিধ সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। স্থানীয় সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার ও উপজেলা চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন চৌধুরী আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন নতুন ভবনটি চালুর। আশা করছি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।