অপহৃতা স্কুল ছাত্রীর সাথে অপহরনকারী কিশোর বখাটের বিয়ে সম্পন্ন করে মামলা থেকে রেহাই পেতে ভূয়া জন্মসনদ উত্তোলনের ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। বুধবার সকালে ওই জন্মসনদে দেখা গেছে বাবার বিয়ের প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে তার ছেলের জন্ম হয়েছে। ঘটনাটি জেলার গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের পশ্চিম শাহজিরা গ্রামের।
জানা গেছে, চন্দ্রহার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনির এক ছাত্রী (১৫) ও আধুনা গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার কন্যাকে অপহরণ করে একই ইউনিয়নের পশ্চিম শাহজিরা গ্রামের প্রভাবশালী মনির মোল্লার পুত্র বখাটে সোহাগ মোল্লা (১৬)। অপহৃতার সাথে অপহরনকারী বখাটের বিয়ে সম্পন্ন করে মামলা থেকে বাঁচতে মনির মোল্লা পাশ্ববর্তী বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদে থেকে একটি ভূয়া জন্মসনদ উত্তোলন করেন। ওই সনদে দেখা গেছে মনির মোল্লার বিয়ের প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে তার ছেলে সোহাগের জন্ম হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অপহরণ মামলা থেকে রেহাই পেতে অপহরনকারী সোহাগের প্রভাবশালী পিতা মনির মোল্লা অপহৃতা স্কুল ছাত্রীর সাথে বখাটে ছেলের বিয়ে দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। কিন্তু বিয়েতে বাঁধ সাধে ছেলে ও মেয়ের বয়স নিয়ে। একপর্যায়ে মনির মোল্লা প্রভাবখাটিয়ে বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ছেলের ভূয়া জন্মসনদ উত্তোলন করেন।
মনির মোল্লার বিবাহ রেজিষ্টারে দেখা গেছে, ২০০০ সালের ১৯ জুলাই মনির মোল্লা উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর গ্রামের আইয়ুব আলী সরদারের কন্যা শাহনাজ বেগমকে বিয়ে করেন। সমাপনী, জেএসসি একাডেমি সনদ ও এসএসসির রেজিষ্ট্রেশন সনদ অনুযায়ী মনিরের পুত্র সোহাগ মোল্লার জন্ম তারিখ ২০০৩ সালের ২০ ডিসেম্বর। প্রভাব খাটিয়ে বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উত্তোলন করা জন্মসনদে সোহাগ মোল্লার জন্ম তারিখ ১৯৯৭ সালের ১২ ডিসেম্বর।
অপহৃতা স্কুল ছাত্রীর পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, তার মেয়েকে অপহরনের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ছেলেকে রক্ষা করার জন্য মনির মোল্লা ভূয়া জাল জন্মসনদ দিয়ে ছেলের বিয়ের রেজিষ্ট্রি কাগজপত্র তৈরী করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ঘটনায় মনির মোল্লার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা দায়ের করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গৌরনদী মডেল থানার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আধুনা গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার দশম শ্রেনিতে পড়-য়া কন্যাকে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সহযোগিদের নিয়ে ফিল্মিস্টাইলে অপহরণ করে পশ্চিম শাহজিরা গ্রামের প্রভাবশালী মনির মোল্লার পুত্র সোহাগ মোল্লা। এ ঘটনায় অপহৃতা ছাত্রীর পিতা বাদি হয়ে ছয়জনকে আসামি করে অপহরণ মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মামলার প্রধান অসামিকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। বর্তমানে বখাটে সোহাগ বরিশাল কারাগারে ও অপহৃতা স্কুল ছাত্রী নিরাপত্তা সেলে রয়েছে। এরইমধ্যে গত ফেব্রুয়ারী মাসে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মনির মোল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা বলতে রাজি হননি। বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রব হাওলাদার বলেন, মনির মোল্লা সরিকল ইউনিয়নের বাসিন্দা। ওই গ্রামটি আমার ইউনিয়নের অর্ন্তভূক্ত নয়। তাই ওই নামে পরিষদ থেকে কোন জন্মসনদ ইস্যু করা হয়নি।