উজানের পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১০সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে আশ্বিন মাসেও খর¯্রােত রুপে প্লাবিত হয়ে বন্যার সৃষ্ঠি করছে তিস্তার তীরবর্তি নি¤œাঞ্চল।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটর। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সে.মি.) বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যবর্তি পর্যন্ত তিস্তার পানি প্রবাহ বিপদসীমার ৩৫/৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলে অর্ধমৃত হয়ে পড়ে খর¯্রােত তিস্তা নদী। গত সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে হঠাৎ বাড়তে থাকে তিস্তার পানি প্রবাহ। যা ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বন্যার সৃষ্ঠি করে। যা ৩০/৩৫ ঘন্টার মধ্যে কমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। মুক্তি পায় জেলার তিস্তা পাড়ের পানিবন্দি প্রায় ৭/৮ হাজার পরিবার। সেই ধকল না কাটতে দ্বিতীয় দফায় আবারো বুধবার সকাল থেকে বাড়তে থাকে পানি প্রবাহ। যা ক্রমেই বেড়েই চলছে এবং বিপদসীমার ১০সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে আবারো বন্যায় প্লাবিত হয়েছে তিস্তার তীরবর্তি নিম্নাঞ্চল। বন্যার পানিতে ডুবে আছে শত শত হেক্টর আমন ধানের ক্ষেত। গেল বন্যার ধকল না কাটতে ফের বন্যার আশংকায় শ^ঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তিস্তাপাড়ের কৃষকরা।
এক মাস আগে হাঁটু পানির তিস্তা শরৎকালে দ্বিতীয় বারের মত আবারও ফুলে ফেঁপে উঠে ফিরে পেয়েছে তার চিরচেনা রূপ। হেঁটে পারি দেওয়া তিস্তায় চলতে শুরু করেছে নৌকা। হাঁকডাক বেড়েছে মাঝি মাল্লাদের। কর্মব্যস্ততা দেখা দিয়েছে তিস্তাপাড়ের জেলে পরিবারে।
এদিকে দ্বিতীয় বারের মত তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি দেখে লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের মানুষ বন্যার আশঙ্কা করলেও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দাবি তিস্তায় নতুন করে বন্যার আশঙ্কা নেই। বৃষ্টির কারণে উজানের ঢল ও এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ফলে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেলেও বন্যার আশঙ্কা নেই। বৃষ্টি কমে গেলেই তিস্তার পানি প্রবাহ কমতে শুরু করবে।
তবে আবারো তিস্তায় পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের আমন চাষিরা ক্ষতি মুখে পড়েছেন। টানা ৩০/৩৫ ঘন্টা বন্যার পানিতে ডুবে থাকার পর সবে মাত্র মাথা উঁচু করে দাড়ানো ধান ক্ষেত দ্বিতীয় বারের মত ডুবে আছে। যা ধান গাছ পচে যেতে পারে বলে আশংকায় শ^ঙ্কিত কৃষকরা।
আদিতমারী উপজেলার গোবর্দ্ধন পাসাইটারী তিস্তা চরাঞ্চলের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, নদীর কিনারে জেগে উঠা ৩ দোন (২৭ শতাংশে দোন) জমিতে আগাম জাতের আমন ধান রোপণ করেন তিনি। সেই আমন ক্ষেতে কিছু অংশ নদী ভাঙনে বিলীন হলেও বাকি অংশ প্রথম বন্যায় দুই দিন ডুবে থাকার পর সবেমাত্র দাড়িয়েছে। সেই ধানক্ষেত পুনরায় ডুবে গেছে। যাতে পচে নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এ কারণেই তিস্তা পাড়ের কৃষকরা আতঙ্কিত বলেও দাবি করেন তিনি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের চর চিনাতুলি গ্রামের রহিম মিয়া ও শমসের আলী জানান, গত বন্যার পানি সড়ে যাওয়ার কয়েকদিন পরেই আবারো বাড়ছে তিস্তার পানি প্রবাহ। এতে তিস্তার প ড়ের নি¤œাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। ডুবেছে নি¤œাঞ্চলের রাস্তাঘাট, বসতবাড়িসহ ফসলি জমি।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বাড়তে থাকে। রাত ৯টায় বিপদসীমার ১০সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আপাতত সবগুলো জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।
ভারত ও দেশের এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের কারণে পানি প্রবাহ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বড় ধরনে বন্যার কোন সতর্কবানী নেই বলে জানান তিনি।