প্রযুক্তির সুবিধা সম্বলিত ই-পাসপোর্টের গুরুত্ব মানুষ দেশের বাইরে গিয়ে বুঝতে পারে। বর্তমান মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ব্যবস্থা থেকে ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থায় উত্তরণ ঘটলে বাংলাদেশিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঝামেলাবিহীনভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন। কারণ ই-পাসপোর্ট এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে বিদ্যমান বইয়ের সঙ্গে একটি ডিজিটাল পাতা (ডাটা পেজ) জুড়ে দেয়া হবে। ওই ডিজিটাল পাতায় উন্নতমানের মেশিন রিডেবল চিপ বসানো থাকবে। এতে সংরক্ষিত থাকবে পাসপোর্টধারীর সব তথ্য। ডাটা পেজে থাকবে পাসপোর্টধারীর তিন ধরনের ছবি, ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশও। ভ্রমণকালে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ কম্পিউটারের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে পাসপোর্টধারীর সব তথ্য-উপাত্ত জানতে পারবেন। তাছাড়া সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো বিভিন্ন বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। ঝামেলাহীনভাবে ই-গেট ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করা যাবে।
এছাড়া, বর্তমানে পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে যে ধরনের এমআরপি বই দেয়া হচ্ছে সেগুলো জাল করা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে এ ধরনের কয়েকটি জাল এমআরপি ধরাও পড়েছে। বিদ্যমান এমআরপিতে ৩৮টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকলেও এর বেশিরভাগই জাল করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু ই-পাসপোর্ট বইয়ের পলিকার্বোনেট ডেটা পেজ জাল করা সম্ভব হবে না। এ ছাড়া ই-পাসপোর্টে থাকবে ৪২টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য।
চলতি বছরের জুলাই মাসেই ই-পাসপোর্ট চালুর কথা ছিল। কিন্তু আমাদের দেশে সময়মত কিছু হয়েছে তার নজির খুব কমই দেখা যায়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ই-পাসপোর্ট জুলাইয়ে চালু করা যায়নি। জার্মানির যে কোম্পানি কাজ করছে তারা ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবে এবং আগামী ডিসেম্বরে ই-পাসপোর্ট চালু হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ই-পাসপোর্ট চালু না হওয়ায় ডিসেম্বর পর্যন্ত যে পরিমাণ এমআরপি পাসপোর্ট লাগবে জরুরি ভিত্তিতে বর্তমান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘ডে লা রিউ ইউকে’ থেকে পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৭৬ (২) অনুযায়ী সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে জরুরি প্রয়োজনে ২ মিলিয়ন (২০ লাখ) মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বুকলেট এবং ২ মিলিয়ন লেমিনেশন ফয়েল সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের জন্য নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৪১ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। এটি এমআরপি পাসপোর্টের শেষ সংস্করণ। ই-পাসপোর্ট এসে গেলে সবাইকে ই-পাসপোর্ট হস্তান্তর করা হবে।
তার মানে, ই-পাসপোর্ট চালু না হওয়া পর্যন্ত যে মেশিন রিডেবেল পাসর্পোটগুলো দেওয়া হচ্ছে এগুলো তৈরিতে যে ব্যয় সেগুলো বাড়তি ব্যয়। কেননা ই-পাসপোর্ট দেওয়া শুরু হলে এগুলোর আর কোনো কাজ থাকবে না। কোনো প্রকল্পের সময় বৃদ্ধি মানে অহেতুক ব্যয় বেড়ে যাওয়া, যা জনগণের অর্থের অপচয়। ই-পাসপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে সময় বৃদ্ধি আর নয়। যেহেতু জুলাইতে হয়নি, অর্থমন্ত্রী নতুন সময় হিসেবে ডিসেম্বরের কথা বলেছেন, সে অনুযায়ী আর কালক্ষেপণ না করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ই-পাসপোর্ট চালু হবে আমরা সে প্রত্যাশা করি।