রাজধানীতে প্রায় সময়ই কিশোর গ্যাংয়ের অপকর্মের কথা জানা যায়। গ্রুপে গ্রুপে মারামারি-খুনোখুনিসহ নানা ধরণের অপরাধ কর্মকা-ে লিপ্ত এই কিশোরেরা। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, নারীঘটিত দ্বন্দ আর কোন অভিযোগ নেই তাদের বিরুদ্ধে? কিছুদিন আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিদায়ী কমিশনার বলেছিলেন রাজধানী থেকে গ্যাং কালচার নির্মূল করা হবে। তিনি বিদায় নিয়েছেন, তাঁর স্থানে এসেছেন নতুন একজন। তবে কিশোর গ্যাংয়ের ঔদ্ধত্য কমেনি।
ঢাকার পাশাপাশি অন্যন্য শহরগুলোতে এমনকি গ্রামেও কিশোর গ্যাংয়ের প্রতাপ। যারই জ¦লজ্যান্ত উদাহরণ খুলনার রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামে কিশোর গ্যাংয়ের কিরিচের (দুই দিক ধারালো ছোরা) আঘাতে সারজিল রহমান সংগ্রাম (২৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু। সংগ্রাম একটি চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন। ঘটনার দিন অফিস শেষে তিনি যখন বাড়ি ফিরছিলেন তখন একদল কিশোর এসে তাকে কিরিচ দিয়ে আঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যায়। কিছুদিন আগে সংগ্রামের একটি মোবাইল ফোন হারিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের লিডার রাহাতের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয়, যার জেরে এ হত্যাকা- ঘটতে পারে উল্লেখ করে নিহতের বাবা জানান, সংগ্রাম মৃত্যুর আগে ঘাতকদের নাম বলে গেছে। এরা হচ্ছে গ্যাং লিডার রাহাত, অমিত, সাজু ওরফে সাধু ও সোহেল। সঙ্গে আরও দুইজন ছিলো যাদের না বলার আগেই সংগ্রাম মারা যায়। তবে প্রাথমিকভাবে হত্যার কারণ জানাতে পারেনি পুলিশ।
প্রশ্ন হচ্ছে, ঢাকায় কিশোরদের এই সংষ্কৃতি গ্রামেও প্রভাব বিস্তার করছে কিভাবে? একসময় গ্রামে কিশোররা খেলাধুলায় মেতে থাকতো। অপরাধসংশ্লিষ্টতার মাত্রা খুব কম কিশোরদের মধ্যেই দেখা যেত। এটা সত্য যে, দেশের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনেক উটকো সমস্যারও সৃষ্টি হয়। কিন্তু এগুলো নিয়ন্ত্রণযোগ্য। খেলার মাঠ কমে যাওয়া, পারিবারিক অনুশাসনের অভাব ও সামাজিক অবক্ষয়সহ বিভন্ন কারণে কিশোররা বখে যাচ্ছে।
বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় প্রশাসন রাত ৮টা-৯টার মধ্যে চায়ের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিচ্ছেন, এতে হয়ত সাময়িক নিয়ন্ত্রণ আসে, কিন্তু কিশোর গ্যাংদের দৌরাত্ম স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। এরজন্য সামাজিক আন্দোলনের প্রয়োজন। অভিভাবকরাই যদি নানা অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে তাহলে সন্তানদের মধ্যেও তার প্রভাব পড়ে। আর কিশোরদের একটি দলের মধ্যে একজন দুষ্ট থাকলে অরও কয়েকজনকে নষ্ট করার জন্য সে-ই যথেষ্ট।
রাষ্ট্রের জনশক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তরুণ-যুবকরা। যে কিশোররা এখন অন্যায়-অপরাধ করছে, আর কয়েক বছর পরেই তারা যুবক বয়সে পা রাখবে। অপরাধী মন নিয়ে থাকা তখনকার এই যুবকদের দিয়ে রাষ্ট্রের কতটুকু উন্নয়ন সাধিত হবে তা ভেবে দেখার বিষয়। বিপথগামী কিশোরদের সুপথে ফিরিয়ে নিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি।