মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাদক বন্ধের জিরো টলারেন্স কার্যক্রম প্রথমে সবচেয়ে আলোচিত হলেও আজ যেন, নিরব ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন। এখনো ধরাছোঁয়ার বাহিরে আছে মুল হোতারা। প্রশাসনের কার্যক্রম সামান্য ধীরগতির হওয়ায় আবারো মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে মাদক চোরাকারবারিরা। বলা যেতে পারে যে, বেহুলা লখিন্দরের নিñিদ্র লৌহ বাসরে যেভাবে কালনাগ প্রবেশ করে দংশন করেছিলো তেমনিভাবে সমাজের নিয়মনীতি কড়া পাহারা অতিক্রম করে ফেলেছে এই ভয়ঙ্কর নেশা মাদকাসক্তি। গ্রাস করে ফেলছে ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে। মাদকাসক্তি বাংলাদেশের জাতীয় সমস্যা। মাদক সমাজ জাতির পঙ্গুত্ব বরণের অন্যতম কারণ। আবার অনেকে বলে মাদক সর্ব অপকর্মের জনক। বর্তমান বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের চেয়েও ভয়ানক রূপ নিয়েছে এই মাদকদ্রব্য। যা সুনামির মত ধ্বংস করছে নতুন প্রজন্ম, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের জীবন, নিঃশেষ করে দিচ্ছে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের মূল ভিত্তিকে। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো আজ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও মাদকসেবীর সংখ্যা মারাত্মকহারে বেড়েই চলছে। তাদের শিক্ষাজীবন হয়ে পড়ছে অনিশ্চিত আর জাঁতি হারাচ্ছে মেধা। বলা যায়, নতুন প্রজন্ম আজ মাদক রোগে আক্রান্ত। সর্বনাশী সর্বগ্রাসী নেশা মাদকাসক্তি আজ আলো ঝলমলে নগরীর প্রাণকেন্দ্র থেকে শুরু করে অন্ধকার গ্রামেও এর অবাধ বিচরণ। হাত বাড়ালেই অহরহ পাওয়া যায় মাদকদ্রব্য। বিশেষ করে তরুণ /তরুণীরা মাদকে আসক্ত হচ্ছে বেশি, তাই তরুণ-তরুণীদের দিকে আমাদের দৃঢ় লক্ষ্য রাখতে হবে। কেননা দীর্ঘ এক সংগ্রামীর ঐতিহ্যের ধারক-বাহক এদেশের তরুণ ও যুবসমাজ। তাই দেশের গণমানুষের হূদয়পটে তরুণরা দখল করে আছে এক বিরাট জায়গা। তাদের কাছ থেকে জাঁতি আত্মবিশ্বাস নিয়ে অনেক আশায় আছে তারা জাতিকে ভবিষ্যতে অনেক কিছু দিবে। সেই তরুণ-তরুণীরা আজ মাদকাসক্তের ফলে তারা তাদের ভবিষ্যৎ গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। মাদকাসক্তির ক্ষতিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন: ১.শারীরিক ২. মানসিক ৩.সামাজিক ৪.অর্থনৈতিক ৫.আধ্যাত্মিক।
ক্ষতির হাত থেকে তরুণ-তরুণীদের বাঁচাতেই হবে। নইলে আজকের তরুণ-তরুণী আগামীদিনের কর্ণধারের বদলে হবে আগামীদিনের বোঝা। আমাদের দেশের নেশাসক্ত তরুণদের পরিমাণ এখনো অতলস্পর্শী নয়, তাই তারুণ্যের এই বিপর্যয় ঠেকাতে এখনই এগিয়ে আসতে হবে। মাদক রোধে এখন মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক ও আইনি যুদ্ধ প্রয়োজন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একশ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, সমাজের উচ্চবিত্ত লোকেরাও মাদক ব্যবসায় জড়িত। এমন কী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ কেউ এসবে জড়িত। এসব ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে চাই, বলি আমাদের দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অনেক শক্তিশালী এর প্রমাণ আমাদেরকে অনেকবার দিয়েছেন তারা, তাই বলি আমাদের দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি চায় বাংলাদেশে একটা চিনিদানা পরিমাণ মাদক প্রবেশ করতে পারবে না। তাহলে তাই, একটা চিনিদানা মাদক প্রবেশ করবে না আমার বিশ্বাস। আমাদের দেশের সরকার মাদকের অপব্যবহারকে অন্যতম মারাত্মক সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত এবং এর প্রতিরোধেও নিয়ন্ত্রণের জন্য আন্তর্জাতিক আঞ্চলিক এবং দ্বিপাক্ষিক প্রচেষ্টায় মাদক রোধে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। মাদক প্রতিরোধে সরকারের পাশপাশি সবার সম্মিলিত চেষ্টায় আমাদের গড়তে হবে সামাজিক আন্দোলন। প্রতিটি পরিবারে প্রতিটি সন্তানের জন্য নিজ নিজ ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। গণসচেতনতার জন্য গণমাধ্যম পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই আসুন, প্রতিরোধে, মাদককে না বলি, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা সবাই জাগ্রত হই, এক হই, অন্তত একটি ক্ষেত্রে আমরা সবাই দল, মত, ধর্ম, বর্ণ, জাত-ভেদ ভুলে হাতে হাত রেখে কাজ করি। মাদক মুক্ত দেশ গড়ি।