একটি শিল্পের ভালো থাকার সঙ্গে ওই শিল্পের কর্মরত কর্মীদের ভালো থাকা নির্ভরশীল। দেশ এখন নানাবিধ সামাজিক-রাজনৈতিক সঙ্কটে নিপতিত। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্রে সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা, দাবিদাওয়া এবং আইনগত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ইতোপূর্বে সংবাদপত্র শিল্পের জন্য নবম বেতনবোর্ড রোয়েদাদের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। গেজেট প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই দেশের সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোর পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের গ্রাচুইটি, ভ্যাট পরিশোধসহ বেশকিছু অসঙ্গতিরও বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ শুরু করে। এসব অসঙ্গতি দূর ও নতুন সংশোধিত গেজেট প্রকাশের দাবিতে গত শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক স্বার্থ সুরক্ষা পরিষদ আয়োজিত ‘গণমাধ্যমের বিদ্যমান সঙ্কট : সাংবাদিকদের স্বার্থ সুরক্ষা’ নিয়ে গোলটেবিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও বৈঠকে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের বেতন কাঠামোতে অন্তর্ভুক্তির আলোচনা এবং মজুরি কাঠামোতে সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষায় ইউনিয়ন নেতাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা উঠতেও বাকী থাকেনি। একথা ঠিক, ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামোতে সংবাদপত্র ও সংবাদসংস্থার কর্মীদের বদলে মালিকদের স্বার্থসংরক্ষণই বেশি হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তথা দলের দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন ওবায়দুল কাদের। যিনি নিজেও একজন স্বনামধন্য সাংবাদিক ছিলেন। সরকার যদি স্বদলীয় লবিংয়ের সাংবাদিক সমিতি, নতজানু, আপসকামীদের নিয়ে মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করতে যেয়ে, সাংবাদিক এবং শ্রমিকের স্বার্থ ও অধিকার ক্ষুণœ করেন তা হবে সংবাদপত্রসেবীদের জন্য অনেক বড় কষ্টের।
সাংবাদিকরা যদি মাথা উঁচু করে লিখতে না পারেন, তাহলে দেশ রসাতলে যাবে। বর্তমানে নোয়াব যে অবস্থান নিয়েছে সংবাদপত্র ও সংবাদপত্রসেবীদের জীবন-জীবিকার স্বার্থে তাদের অবস্থান থেকে ফিরে আসতে হবে। রাষ্ট্রের অন্যান্য স্তম্ভগুলোর প্রতি সরকারের যেমন দায়-দায়িত্ব রয়েছে, ঠিক একইভাবে সাংবাদিক সমাজ ও সংবাদপত্র শিল্পের স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষায় সরকারকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। সাংবাদিকের কাজের ঝুঁকি, চাকরির নিরাপত্তা এবং বর্তমান পে-স্কেলের বাজারে ন্যূনতম চাহিদা পুরণের নিশ্চয়তা ছাড়া সংবাদপত্র শিল্পের ওয়েজবোর্ড একটি কাগুজে ব্যাপার মাত্র। সম্প্রতি হাইকোর্টও বলেছে, ‘সাংবাদিক ছাড়া সংবাদপত্রশিল্প অস্তিত্বহীন’।
অন্যদিকে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রকাশিত গেজেট অনুসারে সংবাদপত্র শিল্পে সমতা ও ভারসাম্যের নীতি অগ্রাহ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ নবম ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদে সাংবাদিক ও সংবাদপত্র মালিক কেউই খুশি নন। ঘোষিত প্রজ্ঞাপণের অসঙ্গতি ও ভ্রান্তির পেছনে সংবাদপত্র মালিক, সাংবাদিক এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর মধ্যে এক প্রকার সমন্বয়হীনতার ছাপ স্পষ্ট। তাই নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের প্রজ্ঞাপন জারির পূর্বে মালিক-সাংবাদিক উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবসম্মত রোয়েদাদ ঘোষণা দেয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।