সিলেটের একটি জনপ্রিয় ফল সাতকড়া। সাতকড়া বিশেষ ঘ্রানযুক্ত লেবু জাতীয় এক প্রকার টক ফল। সাতকড়া দিয়ে মাংস ও মাছ রান্না করে যারা একবার খেয়েছেন কিংবা খিচুরী ও ভাতের সাথে সাতকড়ার আচার খেয়েছেন তাদের জিহবায় লেগে আছে সেই স্বাদ। সাতকড়া দিয়ে রান্না করা মাংস ও মাছ সিলেট অঞ্চলে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ব্যতিক্রমধর্মী ও আকর্ষণীয় ঘ্রানের জন্য সাতকড়া সিলেট অঞ্চলের মানুষের কাছে রসনার অন্যতম অনুষঙ্গ। ব্যাপক চাহিদার এই ফল সিলেটের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে। খাবার সুস্বাদু হওয়ায় ইদানিং এর ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা সিলেটের গন্ডি পেরিয়ে দেশের সব অঞ্চলের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে।
জানা গেছে, উনিশ শতকের গোড়ার দিকে সাতকড়া চাষ শুরু হয় সিলেট অঞ্চলের পাহাড়ী এলাকায়। সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার পাহাড়ী এলাকায় সাতকড়া চাষ হয়ে থাকে। কমলা লেবুর মতো সাতকড়া গাছ আকারে লম্বা ও বড় হয়।
সিলেটে ঘরে ঘরে সাতকড়া আচার ও বিভিন্ন কোম্পানী সাতকড়ার আচার তৈরি করে থাকে। যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে বসবাসরত সিলেটের অধিবাসীরা সাতকড়া ফল ও আচার নিয়ে যান প্রবাসে। সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে সাতকড়ার আচার প্রস্তুত করছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এবং যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করছে। এসব আচার কিনে নিচ্ছে মূলত প্রবাসী সিলেটিরাই।
সিলেট অঞ্চলের শহর কিংবা গ্রামে সবখানেই এর ব্যাপক কদর রয়েছে। শুধু তাই নয়- এর কদর এখন সারা দেশে বিস্তৃত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সিলেট, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল ভ্রমনে যারা আসেন তারা চায়ের সাথে সাতকড়া ফল ও সাতকড়া আচার নিয়ে যেতে ভুল করেন না। এক কথায় বলা যায়- সারাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সাতকড়া।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সাতকড়া একটি ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল। যার পুষ্টিগুন অনেক বেশী। এটি ঔষধী হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যাতে রয়েছে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। তাই সাতকড়া শুধু তরকারিকে সুস্বাদু করে ও টক হিসেবে ব্যবহৃত হয় তা নয়। এটি বাত, শিরা উপশিরার ব্যথা উপশম করে। এ ফলটি জনস্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ উপযোগি। যারা নিয়মিত এই ফল খেয়ে থাকেন তাদের ক্যান্সার, হার্ট, কিডনি ও লিভার রোগাক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কমে যায়।