বাংলাদেশ সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমলে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে পরিগনিত হলেও এটা সত্য যে শিশুশ্রম রোধে সরকার যেন অসহায়। বর্তমান বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও তবুও অপ্রতিরোধ্য শিশুশ্রম। আজকের শিশুরা আগামি দিনের কর্ণধার, একদিন এই শিশুগুলোই আমাদের দেশ পরিচালনা করবে। তাই তাদের বেড়ে ওঠার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল আমাদের জাতিগত পরিচয়, রাষ্ট্রের উন্নয়ন, সমাজ ও পরিবারের সুখ-শান্তি, রাজনৈতিক পরির্বতনের ধারা। শিশুদের শিক্ষালাভ শুধু তাদের ব্যক্তিগত জীবনের জন্য একটি অধ্যায় নয়, এটি সমগ্র জাতির ভবিষ্যতের জন্য সমান তাৎপর্যপূর্ণ। আজ সেই শিশুগুলোই মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমরা ১৬ কোটি ১০ লাখ মানুষ মাত্র কয়েক লাখ বঞ্চিত শিশুদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারিনি। এটা আমাদের জন্য সত্যি লজ্জাজনক। দূনীতি কারণে আমাদের দেশের কিছু লোক হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি করছে আর এই অসহায়, এতিম, নিষ্পাপ, পবিত্র, কোমলমতি প্রাণগুলো বেঁচে থাকার তাগিদে শিশু বয়সেই করে চলছে যুদ্ধ, শুধুমাত্র দু’বেলা দু’মুঠো অন্নের জন্য। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে মোট ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু কোনো না কোনোভাবে শ্রমে যুক্ত। দুর্ভাগা তারা, শ্রমেও যেন তাদের একটু সুখ মেলে না। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোট শিশু শ্রমিকের ৫৭ শতাংশ শিশু মারধর এবং ৪৬ শতাং শিশু গালিগালাজের শিকার হয়। আবার যেসব শিশু শ্রমিক গৃহকর্মীর কাজ করছে তাদের মধ্যে ৬৬ শতাংশ মানসিক নির্যাতন এবং ৭ শতাংশ ধর্ষণের শিকার হয়। শুধু তাই নয় অনেক সময় মালিক বা মনিবরা মাত্রাতিরিক্ত প্রত্যাশার চাপে রাখে শিশু শ্রমিকদের, ফলে শিশু শ্রমিকরা দিশেহারা হয়ে পড়ে, বিষন্নতা গ্রাস করে তাদের। আবার কোনো না কোনো দুর্ঘটনার শিকার হয়। মনিবের প্রত্যাশা পূরণ না হলেই চলে নির্মম নির্যাতন। শিশুশ্রমের যন্ত্রণা-বঞ্চনা শিশুদের মনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় বিপদজ্জনক কাজে বাড়ছেই শিশুশ্রমিকের সংখ্যা। বিপজ্জনক কাজ বলতে, ঝালাই কাজ, পাথরভাঙা, কুলির কাজ, ভ্যানগাড়ি চালানো, যৌনকর্মী হিসেবে ব্যবহার করানো, বিড়ি ও ব্যাটারি ফ্যাক্টরিসহ রাসায়নিক সংক্রান্ত কারখানায় শিশুদের কাজ করানো। এসব কাজ বিপজ্জনক বা ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কাজের না আছে নির্দিষ্ট সময়, না আছে উপযুক্ত মজুরি। রোজ ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টা কাজ করে মজুরি পায় নগণ্য। চরম শোষণ চলছে এই শিশুদের ওপর। এটা সত্য যে, সরকার শিশু শ্রম নিরসনে আপসহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। শিশুদের সার্বিক কল্যাণের লক্ষে জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে ইউনিসেফ বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানের বিভিন্ন সংগঠনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী শিশু শ্রমিক বা বঞ্চিত শিশুদের সংখ্যা কমলেও প্রকৃত সংখ্যা কত হবে? তার সঠিক হিসাব আমরা জানি না। আমি মনে করি প্রকৃত সংখ্যা যাই হোক আমাদের সবার সম্মিলিত চেষ্টায় শিশুশ্রম রোধ করা সম্ভব। বিশেষ করে সমাজের যারা সচ্ছল ব্যক্তি, সরকার, ইউনিসেফসহ বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত চেষ্টায় পারে এসব নিষ্পাপ ফুলগুলোকে প্রতিকুল পরিবেশ থেকে রক্ষা করতে। কেননা এসব বঞ্চিত শিশুদের দূরে রেখে দেশকে একটুও এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। তাই যতœ সহকারে সুস্থ-সুন্দর বিকাশ লাভের সুযোগ এই এতিম-অসহায় অতিদরিদ্র শিশুদের করে দেই তাহলে তারা হবে ভবিষ্যতে এ দেশের একজন আদর্শ কর্মক্ষম ও সুযোগ্য নাগরিক। একসময় তারা দেশের প্রতিটি সেক্টরে অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে এ দেশকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাবে।