তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ওমর ফারুক। যে বয়সে সহপাঠীদেরর সাথে হৈ-হুল্লোর, খেলাধুলা করে সময় কাটানোর কথা, সেই বয়সে বিছানায় শুয়ে জানালা দিয়ে সমবয়সীদের স্কুলে যাওয়া, খেলাধুলা দেখে সময় কাটে আর নীরবে কাঁদে। শারীরিক অক্ষমতায় হাঁটা চলা, খেলাধুলার উপর বিধিনিষেধ থাকায় মায়ের কোলে করে শেষ বিকালে কখনও কখনও দিনের আলোতে সূর্যস্নান করলেও শেষ কবে ক্রিকেট ব্যাট হাতে নিয়েছে তা মনে নেই ওমর ফারুকের। অথচ সাকিবের মতো ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতো ওমর। শিশু বয়সে দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে এখন মাকেই কোলে বসিয়ে তার শৈশবের দুরন্তপনার সকল আবদার মেটাতে হচ্ছে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চাকামইয়া ইউনিয়নের বেতমোর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির মেধাবী ছাত্র ওমর ফারুকের জীবনের অমানিশার অন্ধকার নেমে আসে এ বছরের শুরুতে। এক রৌদ্রজ্জ্বল সকালে যখন স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে ওমর। স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ক্ষণিক সময়ের জন্য সুস্থ্য হলেও আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। ডাক্তারদের পরামর্শে তাকে ঢাকায় নেয়া হয়। সেখানে ধরা পড়ে তার হার্টের বাল্ব নষ্ট হয়ে গেছে।
প্রায় তিন বছর আগে স্বামী কালামকে হারিয়ে যে সন্তানের মুখ চেয়ে কঠোর শ্রম বিক্রি করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেছিলো ওমরের অসহায় মা শেফালী বেগম। ছেলের এ অসুস্থতার খবরে সে ভেঙ্গে পড়ে। নিজের জমানো শেষ সম্বলটুকু দিয়ে ছেলের চিকিৎসা করালেও দেড় লাখ টাকার কারণে বন্ধ হয়ে যায় ওমরের চিকিৎসা। এতে ক্রমশ মৃত্যুর দিকে পতিত হয় ওমর ফারুক। ছেলের চিকিৎসা খরচ যোগাতে অষ্টম শ্রেণি পড়-য়া মেয়ে রিয়ামনিরও পড়া লেখা বন্ধ হয়ে যায়। এ অসহায় পরিবারের দূরাবস্থা নিয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা বিভিন্ন সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশ করলে এগিয়ে কলাপাড়ার বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যাণ পরিষদের সদস্যরা।
এ পরিষদের সদস্য এস কে রঞ্জন, এস এম হারুন অর রশিদ মুক্তা, স্বজল কর্মকার, শামিম বেপারী, খায়রুল ইসলাম বলেন, সদা হাস্যোজ্জল ওমরের মলিন মুখ তাঁদের ব্যথিত করেছে। এই কৈশোরে দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হলেও তার চোখে বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছে শক্তি দেখে আমরা শক্তি পাই কিছু করার।
তাঁরা বলেন, এই শিশু চিকিৎসার টাকা সংগ্রহের জন্য কলাপাড়ার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে সহায়তা প্রার্থনা করে। শিক্ষার্থীরা তাঁদের একদিনের টিফিনের টাকা ওমরের চিকিৎসা সহায়তা ফান্ডে প্রদাস করেন। একই সাথে এগিয়ে আসে সমাজের দানশীল ব্যক্তিরা। মাত্র কয়েকদিনে তাঁরা এক লাখ টাকা সংগ্রহ করেন।
সোমবার রাত আটটায় ওমরের চিকিৎসার জন্য এ টাকা তাঁর মা শেফালী বেগমের হাতে হস্তান্তর করা হয়। কলাপাড়ায় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ টাকা বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ মো. মহিব্বুর রহমান এ শিশুর চিকিৎসা ফান্ডে আরও ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন।
বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোশারফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সংবাদকর্মী মেজবাহউদ্দিন মাননু সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান, পৌর মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার, বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দিদার উদ্দিন আহমেদ মাসুম।
অনুষ্ঠানে ওমর ফারুকের মা শেফালীর বেগমের হাতে প্রধান অতিথি চিকিৎসা টাকা তুলে দেন এবং তাঁকে সব ধরণের সহায়তার আশ্বাস দেন। কিন্তু আর্থিক সংকটে অষ্টম শ্রেণি পড়-য়া রিয়ামনির পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার পথে। এ ছাড়া চিকিৎসা পরবর্তী ওমরের আরও কয়েক লাখ টাকা দরকার। এজন্য তাঁরা সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।