কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ঝাঁউকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বারোমাসিয়া ও ধরলা নদী বেষ্টিত এই বিদ্যালয়টি ২০০৯ সালে গড়ে উঠে। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১০ বছরেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভাগ্যে জোটেনি সংযোগ সড়ক। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের।
এদিকে ২০১৪ সালে এই বিদ্যালয়টিকে তৃতীয় ধাপে জাতীয়করণ করা হয়েছে। জাতীয়করণের ৪ বছর অতিবাহিত হলেও জোটেনি স্কুলে যাওয়ার সংযোগ সড়ক। গড়ে উঠেনি পাকা ভবন। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়টিতে তিন জন শিক্ষকসহ মোট ১৬১ জন শিক্ষার্থী আছে। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত সংযোগ সড়ক না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বছরের পর বছর ধরে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। যেন দেখার কেউ নেই।
চরাঞ্চলের বারোমাসিয়া ও ধরলা নদী বেষ্টিত বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়মিত যাতায়াত করতে হচ্ছে আবাদি জমির চিকন আইল দিয়ে। এ ছাড়া বারোমাসিয়া নদীর উপর ঝুঁকিপূর্ণ একটি সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে হয় তাদের। এতে শিশু শিক্ষার্থীরা পা পিঁচলে কাঁদামাটিতে পড়ে বই খাতা ও পরনের কাপড় ভিজে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অপর দিকে জমির মালিকদেরও বিধিনিষেধ তো রয়েছেই।
এর ফলে স্কুলের শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এই দুর্ভোগের চিত্র। সেই সাথে রয়েছে শিক্ষক সংকটও। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শতভাগ থাকলেও প্রধান শিক্ষক ও দুইজন সহকারী শিক্ষিকা দিয়ে চলছে পাঠদান। সেই সঙ্গে শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে খোলা আকাশের নিচে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান।
শিক্ষার্থী এনামুল হক, দরদী খাতুন, শরীফা খাতুন ও লাল চাঁন বাদশা জানায়, আমাদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই। মানুষের আবাদি জমির আইল দিয়ে স্কুলে যাই। অনেক সময় আইল দিয়ে যাতায়াতের সময় পা পিচলে মাটিতে পড়ে যাই, তখন আমাদের বই খাতাসহ গায়ের পোশাকগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
তারা আরও জানায়, শ্রেণিকক্ষ না থাকায় খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করতে হয়। আমরা আবাদি জমির আইল দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করি। বর্ষা মৌসুমে বারোমাসিয়া ও ধরলা নদীসহ জমির আইল পানিতে ডুবে যাওয়ায় আমাদের স্কুলে যাওয়ায় বিঘœ ঘটে। তাই বর্ষাকালে আমরা স্কুলে যেতে পারি না। আমরা দ্রুত শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক সংকটসহ বিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তা নির্মাণের দাবি জানাই। সহকারী শিক্ষিকা পারুল খাতুন বলেন, বিদ্যালয়ের যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই। তাই অনেক কষ্ট করে বারোমাসিয়া নদীর উপর ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পাড় হয়ে এবং মানুষের আবাদি জমির আইল দিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয় আমাদের।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আশরাফুল হক জানান, আমাদের বিদ্যালয়ে সংযোগ সড়ক স্থাপন করা খুব জরুরী। আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে মানুষের জমির চিকন আইল দিয়ে বিদ্যালয়ে আসে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিদ্যালয়ের সংযোগ সড়কের দাবি জানাচ্ছি। চরাঞ্চলের একমাত্র বিদ্যালয়টিতে মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করা খুবই কষ্টকর। শিক্ষক স্বল্পতা দূর করে বিদ্যালয়ের পাঠদান সুষ্ঠু করার দাবি জানাচ্ছি।