রাজশাহীর বাঘায় বন্যায় পানিবন্দীরা ত্রান পেলেও বরাদ্দ নেই পশুদের। পশুদের জন্য ত্রানের জন্য হাহাকার করছে পশু পালনকারীরা। তবে ঝুঁকিদের নিরাপদ আশ্রয় নেয়ার আহবান জানানো হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দিনব্যাপী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চৌমাদিয়া, আতারপাড়া, দিয়ারকাদিরপুর, চকরাজাপুর, লক্ষীনগর, দাদপুর, কালিদাসখালী, মানিকের চর, জোতশী, পলাশি ফতেপুর চরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এ সময় পশু পালনকারীরা নিজেদের চেয়ে পশুদের জন্য ত্রান সামগ্রীর জোর দাবি জানান। ইতোমধ্যে উপজেলার লক্ষীনগর, পলাশি ফতেপুর, চরকালিদাসখালী, পশ্চিম চরকালিদাসখালী, কালিদাসখালী, কাদিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাদিরপুর, কালিদাসখালী, চকরাজাপুর, পলাশি ফতেপুর, খানপুর জেপি উচ্চ বিদ্যালয়সহ ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্টানকে আশ্রয়ণ কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নে বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলে অতিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানি বৃদ্ধিতে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় ২ হাজার পরিবার। যাদের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্রমান্বয়ে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এই ত্রান বিতরণের অংশগ্রহণ করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. লায়েব উদ্দীন লাভলু, নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা, বাঘা থানার ওসি নজরুল ইসলাম, চকরাজাপুর ইউনিয়নের আজিজুল আযম, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোকাদ্দেস আলী সরকার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম, একটি বাড়ি-একটি খামার প্রকল্প কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম, উপজেলা প্রানী সম্পাদ কর্মকর্তা ডা. আবদুল কাদির বাঘা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ডা. আবদুল লতিফ মিঞা, সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি ও প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমুনুল হক আমান, সদস্য আক্তার রহমান প্রমুখ। বৃহস্পতিবারসহ ৪ তিন ব্যাপি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেড় শতাধিক গৃহহারা পরিবারসহ ২ হাজার ৫০০ পরিবারের মাঝে ২০ কেজি করে চাল, ২ কেজি ডাল, ২ সুয়াবিন, ২ কেজি চিনি, এবং শুখনা খবার চিড়া, মুড়ি, স্যালাইন, সেমাই বিতরণ করেন৩
পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর চর ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে। উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা, গবাদি পশুসহ হাজার হাজার একর ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে আছে। গৃহহারারা পরিবারগুলো ঘর-বাড়ি ও সম্পদ হারিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে। ফারাক্কার গেট ঘুলে দেয়ায় কারণে পদ্মার ১৫টি চরের প্রতিটি বাড়িতে পানি উঠেছে। পানি উঠার সাথে সাথে বর্তমানে পদ্মার চরের মানুষ দুঃখ দূর্দশার মধ্যে জীবন যাবন করছে। পানি উঠার কারণে চরের ১১টি স্কুল ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। মানুষের পাশাপাশি পশু নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে পালনকারীরা।
চৌমাদিয়া চরের মহিষ পালনকারী আবুল কালাম ব্যাপারি বলেন, আমার ২০টি মহিষ আছে। এগুলো নিয়ে মহাবিপদে আছি। বাড়ি-ঘর ছেড়ে একটু উঁচু স্থান চৌমাদিয়ার রহমান মেম্বরের বাড়ির পাশে আশ্রয় নিয়েছি। আমাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করা হলেও গরু-মহিষের জন্য কোন ব্যবস্থা করা হচ্ছেনা। ফলে গরু-মহিষের খাদ্যের বিষয়ে বড় সমস্যায় আছি। আবুল কালাম ব্যাপারির মতো আরো মহিষ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন চৌমাদিয়া চরের তারা ব্যাপারি ১৮টি, খোরদেশ ফকির ৭টি, বেলাল হোসেন ১৮টি, মসলেম উদ্দিন ১৫টি, আলিম জান্দার ২০টি মহিষ নিয়ে চৌমাদিয়া মেম্বরের বাড়ির পাশে উঁচু স্থান আশ্রয় নিয়েছেন। তারা নিরুপায় হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবদুল কাদির বলেন, গরু-মহিষের জন্য ওষধ সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু খাদ্যেও বিষয়ে এখনো সরবারাহ করতে পারেনি। বিষয়টি উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে বানভাসীদের উদ্দেশ্যে বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. লায়েব উদ্দিন লাভলু বলেন, আপনারা নিজেদের অসহায় ভাববেন না। আমরা সব সময় আপনাদের পাশে আছি। এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনাদের পাশে আছেন। মসজিদে বন্যাত্রদের জন্য দোয়া করার আহবান জানান।
অপর দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, বিপদ আসতেই পারে, কিন্তু ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। আমি আপনাদের দু:খ-দুর্দশার কথা চিন্তা করে জেলা প্রশাসক এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে বিষয়টি অবগত করে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য চাহিদা পাঠিয়েছিলাম। সেই মোতাবেক ত্রান সামগ্রী বিরতরণ করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, লক্ষীনগর, পলাশি ফতেপুর, চরকালিদাসখালী, পশ্চিম চরকালিদাসখালী, কালিদাসখালী, কাদিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাদিরপুর, কালিদাসখালী, চকরাজাপুর, পলাশি ফতেপুর, খানপুর জেপি উচ্চ বিদ্যালয়সহ ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্টানকে আশ্রয়ণ কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। গৃহহারা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থরা এ সকল প্রতিষ্টানে আশ্রয় নিয়েছেন।
লক্ষীনগর চরের সারমিন আক্তার আছিয়া বলেন, আমার বাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ের যাওয়ায় বৃদ্ধ শশুর-শাশুড়ি, ও দুই মেয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে লক্ষীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছি। তার সাথে আমার ৪টি গরু ও দুটি ছাগল রয়েছে। আমার পরিবারের জন্য ত্রান দেয়া হলেও গরু-ছাগলের জন্য কোন কিছুই দেয়া হয়নি। ফলে বৃদ্ধ শশুর-শাশুড়ির চেয়ে গরু-ছাগল নিয়ে বেশি বিপদে আছি।
এ বিষয়ে পদ্মার চরের মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল আযম জানান, গত ১০ দিন ধরে নদীতে ক্রমান্বয়ে পানি বৃদ্দির ফলে গৃহহীন হয়ে পড়েছে প্রায় ২ শতাধিক পরিবার। এছাড়াও কিছু-কিছু এলাকায় ভাঙ্গন এবং জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ২ হাজার পরিবার। সেই সাথে প্রায় ৭ হাজার গবাদি পশু নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে পালনকরীরা।