কাপ্তাই হ্রদের নিরন্তর সৌন্দর্য যেখানে নদী, বন, পাহাড়, ঝরণাধারা ও জীববৈচিত্র প্রকৃতিকে দিয়েছে এক নিবিড় বৈচিত্র্যের মেলবন্ধন। রাঙ্গামাটি জেলার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান হল কাপ্তাই হ্রদ। ১৯৫৬ সালে কর্ণফুলি নদীর উপর কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করা হলে এ হ্রদের সৃষ্টি হয়। একই সাথে এই বাঁধ দ্বারা সৃষ্টি করা হয় দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎকেন্দ্র যা থেকে প্রতিদিন ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্র্যৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে।
হ্রদটি দেখতে ইংরেজি H বর্ণ আকৃতি বিশিষ্ট, যার দুটি বাহু গিরিসঙ্কট দ্বারা সংযুক্ত হয়ে কর্ণফুলি নদীর গতিপথের সাথে মিলিত হয়েছে।সর্বোচ্চ গভীরতা ৩৬ মিটার এবং এর গড় গভীরতা ৯ মিটার ।প্রায় ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর আয়তনের কৃত্রিম এই হ্রদ উঁচু উঁচু পাহাড় এবং পানির নিচ থেকে পাহাড় ও বনভূমি দ্বারা ঘেরা। এই হ্রদের মূল আকর্ষণ বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রীজ যাকে ঘিরেই মূলত রাঙামাটি জেলার পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেছে।
এছাড়াও এ হ্রদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ শুভলং ঝরনা ও এর আশপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য। ট্রলারে করে যাওয়া যায় শুভলং জলপ্রাপাতে।চারদিকে বিশাল বিশাল সবুজ পাহাড়ঘেরা এই ঝরনায় পানি পড়ার অপরূপনৈসর্গিক দৃশ্য । মূলত বর্ষাকালে সবুজ পাহাড়ঘেরা এই ঝরনার পরিপূর্ণ রূপ প্রকাশ পায়।
হ্রদের পাড়েই রয়েছে চাকমা রাজবাড়ি ও বৌদ্ধ মন্দির। এছাড়াও রাঙ্গামাটির অদূরেই অবস্থিত রাজবন বিহার বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বৃহত্তম বিহার, যা পূণার্থী এবং দর্শনার্থীদের অন্যতম আর্কষণীয় স্থান। ইঞ্জিন নৌকা করে কাপ্তাই হ্রদ উপভোগ করার সময় শুভলংয়ের দিকে যত এগোনো যায় ততই প্রকৃতির এক অপরূপ নৈসর্গিক দৃশ্য সবার মন কেড়ে নেয়।। সামনে যেতে যেতে চোখে দৃশ্যমান হয় মাছ ধরে ঘরে ফেরা মানুষ, স্থানীয়দের হাতটানা ভেলা, পরিযায়ী পাখির আশ্রয়স্থল, ছোট ছোট টিলায় মানু্ষের বসতি। সাধারণত লেকের পাড়ে আদিবাসীদের বসবাস এ অঞ্চলে। ছোট ছেটা চায়ের দোকান থেকে চা পান করার মত সুযোগ সহ বাংলা কলা খাওয়ার সুযোগ মেলে। এখানের চায়ের এক অন্য রকম স্বাদ পাওয়া যায় ফলে মন চাঙ্গা হয়ে উঠে।এছাড়াও এখানে পাবেন স্থানীয় খাবার “বিগল বিচি”, “কচি বাঁশের তরকারী”, “কেবাং”। রাঙ্গামাটি এবং কাপ্তাইকে সংযোগকারী সড়কটি পাহাড়ের অভ্যন্তরে আঁকাবঁকা ভাবে চলে যাওয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বন্যপ্রাণীর দেখা পাওয়া যায়।একদিকে সুবিশাল পাহাড়, উঁচু-নিচু পাহাড়ি সড়ক; অন্যদিকে কাপ্তাই হ্রদের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য প্রকৃতিকে দিয়েছে এক নিবিড় বৈচিত্র্যের মেলবন্ধন। পাহাড়ের গায়ে ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ আর সুবজের অভয়ারন্য। সব মিলিয়ে কাপ্তাই হ্রদ পর্যটন, প্রাণিসম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের এক বিশাল সমাহার।
কাপ্তাই না গেলে রাঙ্গামাটির প্রকৃত সৌন্দর্য দেখা অপূর্ন রয়ে যায়। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী পেপার মিল, কর্ণফুলী নদীর অপূর্ব দৃশ্য, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তবে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী পেপার মিল দেখার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়।
যাতায়াত ব্যবস্থা:
ঢাকা থেকে কাপ্তাইয়ে যেতে চাইলে সায়েদাবাদ অথবা কমলাপুর থেকে হানিফ, সাউদিয়া, এস আলম, শ্যামলী ইত্যাদি বাস সার্ভিস ব্যবহার করা যায়। প্রায় ৬০০-৮০০/-টাকা ভায়াড় কাপ্তাই যেতে সময় লাগবে প্রায় ৮ ঘন্টার মতো। এ ছাড়াও সিএনজি নিয়ে লিচুবাগান গিয়ে আবার অন্য একটি সিএনজি নিয়ে কাপ্তাই বরইছড়ি যাওয়া যায়।
থাকা ও খাবার ব্যবস্থা:
ভালো মানের কোন বানিজ্যিক হোটেল বা মোটেল নেই কাপ্তাইয়ে রাত্রি যাপনের জন্য। তাই ভ্রমণের পূর্বেই সারকারি রেস্ট হাউস বা বিশ্রামাগারের সন্ধান করা ভাল। এছাড়াও সেনাবাহিনী, পিডিবি, পানি উন্নয় বোর্ড এবং বন বিভাগের রেস্ট হাউসগুলোতে সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসের অনুমতি সাপেক্ষে অল্প খরচে থাকার ব্যবস্থা করা যায়। খাবার দাবার বলতে স্থানীয় আদিবাসিদের রান্না করা খাবার পাওয়া যায়। এছাড়াও শুকনা খাবার যেমন বিস্কুট, চানাচুর, বনরুটি, বাংলা কলা ইত্যাদি পাওযা যায়।