বহু রাষ্ট্রের অধিপতি, রাজাধিরাজ, যিনি সার্বভৌম নৃপতি তাকেই বলা হতো সম্রাট। এসব অর্জন ছাড়াও রুপকথার গল্পের মতো, স্বপ্নের মতো, সম্রাটই নয় ‘মহাসম্রাট’ বনে যাওয়া; যাকে বলা হতো ঢাকা শহরের অঘোষিত সম্রাট। যুবলীগ নেতা হয়ে যিনি আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে আকাশ ছোঁয়া উচ্চতায় উঠে গেছেন। আর বিশাল বিত্ত-বৈভব যেন জাদুবলে তার কাছে স্বেচ্ছায় ধরা দিয়েছে।
কদিন আগেও ঢাকার রাজপথে মোটরসাইকেলের বহর, চারপাশে নিজস্ব অস্ত্রবাজ মহাসম্রাটধারীদের তটস্থ প্রটেকশন নিয়ে যিনি চলতেন। প্রভাব-প্রতিপত্তি, অর্থ-বিত্ত, গাড়িবহরের শোভাযাত্রাসমেত রাজপথ দাপিয়ে বেড়ানো, শানদার বেশভূষা, উপর্যুপরি অবিশ্রান্ত আধিপত্যÑ এসব মিলিয়ে তিনি রীতিমতো এক সম্রাটই! তার জৌলুসময় যাপিতজীবন দেখলে ঐতিহ্যবাহী মোগল সম্রাটদেরও লজ্জায় মাথা নুয়ে যেতো।
কিন্তু বালুর বাঁধের মতো মুহূর্তেই ক্যাসিনো-ঝড়ে ল-ভ- হয়ে যাবে, হারিয়ে যাবে, ওলটপালট হয়ে যাবে, ঝলমলে জুয়া সাম্রাজ্যের সাথে সার্বক্ষণিক পরিবেষ্ঠিত তার গড়ে তোলা বিশাল বাহিনীর একচ্ছত্রাধিপত্য ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতা, এটা কখনো তিনি ভেবেছিলেন কী? সম্রাটতুল্য উত্থানের অন্যপিঠে যে পতনও আছে, তা বোধ করি তার জানার ও ভাবার সময় ছিল না।
শধু দেশেই নয়, ঢাকার ‘ক্যাসিনো কিং’ সম্রাট মাসে অন্তত ১০ বার সিঙ্গাপুরে গিয়ে জুয়া খেলতেন। সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় জুয়ার আস্তানা মেরিনা বে স্যান্ডস ক্যাসিনোয়, পশ্চিমা ধনকুবের জুয়াড়িদের সাথে সম্রাটও ভিআইপি জুয়াড়ি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রথম ক্লাসের জুয়াড়ি হওয়ায় সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি এয়ারপোর্ট থেকে ‘ভিআইপি প্রটোকলে’ নিয়ে যাওয়া হতো তাকে।
যাই হোক, অনেক নাটকীয়তার পর গ্রেপ্তার হল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে। এজন্য আমরা ধন্যবাদ জানাই সরকারকে। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে যখন সম্রাটের চ্যালা-চমু-াদের ধরা হচ্ছিল, তখনই প্রশ্ন উঠছিল গডফাদারকে কেন ধরা হচ্ছে না। এতে সরকারের স্বচ্ছতা ও সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছিল। দেশের শিক্ষিত ও সমাজসচেতন মানুষ জানে, সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজরা দুটি বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পতাকা তলে আশ্রয় নেয় এবং তাদের নেতাকর্মী সাজে। আমরা চাই চলমান এই অভিযান যেন বিএনপির অপারেশন ক্লিনহার্টের মতো স্বল্প সময়ের জন্য চমক সৃষ্টিকারী না হয়। এটা যেন ঝিমিয়ে না পড়ে স্থায়ী একটি ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আগামীতেও তার ব্যত্যয় যেনো না ঘটে।
সম্প্রতি দুবাইয়ে কুখ্যাত সন্ত্রাসী জিসানকে গ্রেফতার করা হয়। যুবলীগের সম্রাটও এই জিসান বাহিনীর সদস্য বলে প্রচার আছে। এ সব ঘটনা থেকে অনুমান করা যায়, জিসান ও সম্রাটকে আটকের মধ্য দিয়ে অন্ধকার জগতের অপরাধীদের সাম্রাজ্য তছনছ হয়ে গেল। জিসান-সম্রাট যুগের অবসানের পর নতুন কারো সাম্রাজ্য যেনো প্রতিষ্ঠা না হয় আমরা সরকারের কাছ থেকে সে কমিটমেন্ট আশা করছি।