কাস্টমস আইনে কর্মকর্তাদের প্রথম শ্রেণির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রদানের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে প্রশাসন সার্ভিস। ওই লক্ষ্যে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বিএএসএ নতুন কাস্টমস আইনে কর্মকর্তাদের প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া ১৮৯ ধারাটি বাতিল করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছে। আর ওই চিঠির অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকেও দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, ১৯৬৯ সালের কাস্টমস আইনে কাস্টমস কর্মকর্তাদের প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া সংক্রান্ত ১৫৮এ ধারাটি ছিল না। বিগত ১১ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘কাস্টমস বিল-২০১৯’ সংসদে উত্থাপন করেন। পরে তা ৩০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। বিএএসএ এবং এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ১৯৬৯ সালের কাস্টমস আইনে কর্মকর্তাদের প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া হয়নি। পরে আইন সংশোধন করে নতুন ধারা ১৫৮এ যুক্তের মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হয়। ওই ধারায় বলা আছে, কাস্টমস আইনের অধীনে সহকারী কাস্টমস কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তারা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের মতো ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী যে কোনো স্থানে প্রবেশ, তল্লাশি, আটক এবং গ্রেফতার করতে পারবেন। প্রস্তাবিত নতুন কাস্টমস আইনের এ ক্ষমতা বহাল রাখা হয়েছে ১৮৯ ধারা। তবে এনবিআর চেয়ারম্যানকে দেয়া বিএএসএ’র সভাপতি হেলালুদ্দীন আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৯৬৯ সালের কাস্টমস আইনে কাস্টমস কর্মকর্তাদের প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া সংক্রান্ত ১৫৮এ ধারাটি ছিল না। ২০০০ সালে একটি সংশোধনীর মাধ্যমে এটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রস্তাবিত নতুন আইনেও ১৮৯ ধারায় প্রবেশ, তল্লাশি, আটক ও গ্রেফতারের উদ্দেশ্য পূরণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওপর অর্পণের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ ও ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের পর বর্তমানে ১০৭ ধারা অনুযায়ী মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ কমিশনারকে এবং ১২১ ধারা অনুযায়ী বিশেষ প্রয়োজনের নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সহকারী পুলিশ সুপারের নিচে নয়- এমন পুলিশ কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কোনো কর্মকর্তাকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণের কোনো সুযোগ নেই। ফলে ফৌজদারি কার্যবিধিতে বর্ণিত ম্যাজিস্ট্রেসির বর্তমান রূপরেখার সঙ্গে প্রস্তাবিত কাস্টমস আইনের ১৮৯ ধারার বিধান সাংঘর্ষিক ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত কাস্টমস আইনের বিভিন্ন ধারায় কর্মকর্তাদের যাবতীয় ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ১৮৭ ধারায় কাস্টমস কর্মকর্তাদের দলিলপত্র, রেকর্ডপত্রের দখল; ১৮৮ ধারায় তল্লাশি; ১৯১ ধারায় সন্দেহজনক ব্যক্তিকে আটক করে দেহ স্ক্রিন ও এক্সরে করা; ১৯২ ধারায় গ্রেফতার, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো, তদন্ত পরিচালনা এবং এসব ক্ষমতা প্রয়োগে ফৌজদারি কার্যবিধির পদ্ধতি প্রয়োগ- এমনকি একই ধারার ৭ উপধারায় জামিন দেয়ার ক্ষমতা প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ১৯৪ ধারায় প্রয়োজনে কোনো স্থানে প্রবেশ, তল্লাশি, গ্রেফতার/পলায়ন রোধে বলপ্রয়োগ ক্ষমতা; ১৯৭ ধারায় যানবাহন তল্লাশি; ১৯৮ ধারায় ব্যক্তিকে পরীক্ষা; ১৯৯-২০১ ধারায় দলিল তলব/পরোয়ানা জারি; ২০৩ ধারায় বাজেয়াপ্ত পণ্য জব্দ ও ২০৪ ধারায় তা নিষ্পত্তির ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এসব ধারায় কাস্টমস কর্মকর্তাদের প্রবেশ, তল্লাশি, আটক, গ্রেফতার করাসহ বিভিন্ন এখতিয়ার দেয়া সত্ত্বেও ১৮৯ ধারায় প্রবেশ, তল্লাশি, আটক ও গ্রেফতারের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। বরং তা করার মাধ্যমে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহলে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেসি নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, বিএএসএ’র পক্ষ থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের উদাহরণ তুলে বলা হয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮-এর ২০, ২১, ২২, ২৩ ধারায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সন্দেহজনক স্থানে তল্লাশি, আটক ও গ্রেফতারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর ২৫ ও ২৬ ধারায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রকাশ্য স্থান বা যানবাহনে তল্লাশি, আইনপরিপন্থী পণ্য আটক এবং পণ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেফতারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কাস্টমস আইনেও প্রবেশ, তল্লাশি, আটক ও গ্রেফতারের এখতিয়ারগুলো উল্লেখ থাকাই যথেষ্ট। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেসির সঙ্গে এটি সম্পর্কিত করা অনাবশ্যক। তাই প্রস্তাবিত কাস্টমস বিল থেকে ১৮৯ ধারা বিযুক্ত করতে চিঠিতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে বিসিএস কাস্টমস ও ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, কাস্টমস কর্মকর্তাদের আগে থেকেই ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। নতুন আইনে নতুন করে যুক্ত করা হয়নি। এ নিয়ে অন্য কোনো ক্যাডার সার্ভিসের সঙ্গে কখনো বিরোধ হয়নি। তাছাড়া বিশ্বের অন্য দেশে কাস্টমসকে আরো বেশি ক্ষমতা দেয়া আছে। যেমন- যুক্তরাষ্ট্র কাস্টমস ইমিগ্রেশন ও বর্ডারে পেট্রোলিংয়ের কাজ করে। একটা সময় কাস্টমস থেকে সরকার সবচেয়ে বেশি রাজস্ব পেত। এখন কাস্টমস থেকে রাজস্ব আদায় ধীরে ধীরে কমছে। পাশাপাশি কাস্টমসের কাজের ধরনও পাল্টেছে। সীমান্ত সুরক্ষা, এন্টিস্মাগলিং, নকল পণ্য প্রবেশ রোধে কাস্টমস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সে ক্ষেত্রে কাস্টমসকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া না হলে অনেক কাজই আইনসিদ্ধ হবে না।