লেডি ম্যাকবেথের উচ্চাভিলাষ আর প্ররোচণায় উদ্বুদ্ধ হয়েই প্রধান সেনাপতি ম্যাকবেথ এক রাতের অতিথি শ্রদ্ধেয় ও সম্মানিত রাজা ডানকানকে ঘুমুন্ত অবস্থায় নৃশংসভাবে গভীর রাতে হত্যা করতে সচেষ্ট হন। হত্যা করার সময় বার বার ম্যাকবেথের বিবেক জেগে উঠলেও ক্ষমতার লোভ, প্রিয় স্ত্রীর রক্ত চক্ষুর শাসন এবং রাজা হওয়ার আকাংখা- সবমিলে আমরা ইতিহাসের পাতায় শেক্সপীয়রের বিশ্বখ্যাত ট্র্যাজেডি নাটকের খল নায়ক ম্যাকবেথকেই দেখতে পাই। লেডি ম্যাকবেথ এই জঘন্য হত্যাকান্ডের পরিকল্পক ও সহযোগি কিন্তু সরাসরি হত্যাকারী নন। তবুও আজ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি দর্শকের কাছে লেডি ম্যাকবেথ খানিকটা অনুকম্পা পেলেও, বিন্দুমাত্র করুণাও কোন দর্শকের মনে জেগে ওঠে না, লেডি ম্যাকবেথ কিংবা ম্যাকবেথের ওপর। এই যে মানুষের ক্ষমতার লোভ, রাজাসনে বসা, রাজা-রানী হওয়া-রক্তপাত ঘটানো, গুপ্ত হত্যা করে সাজানো সংসারকে তছনছ করা- অত্যাচারী হওয়া, রাজত্বকে করায়ত্ব করা, অপশাসন করার মাধ্যমে আমজনতার ওপর প্রভুত্ব বিস্তার করা- যুগ যুগান্তর থেকে কাল কালান্তর পর্যন্ত এক একটি অধ্যায়, যা ইতিহাস ও সাহিত্যে অনেকটাই জায়গাজুড়ে রয়েছে।
আকাশচুম্বি জনপ্রিয় রাজা ডানকানকে হত্যার পর কিছুদিন কেটে গেছে। ম্যাকবেথ ও লেডি ম্যাকবেথের অপশাসন আর তাদের অত্যাচারীর ভূমিকায় মানুষ এখন ক্ষুব্ধ। আমজনতা বুঝতে ও অনুভব করতে পারছে, তাদের প্রিয় ও মহান রাজা ডানকান কতই না উদার এবং জন দরদী মানুষ ছিলেন। জনগণের প্রত্যাশা তাই এই অপশাসন ও অত্যাচারের একদিন অবসান ঘটবেই । দেশ ও জাতি মুক্তি পাবে ম্যাকবেথ অপশাসন থেকে। তারা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারবে এবং ভালভাবে খেতে ও পরতে পারবে। সর্বপরি নিশ্চিন্তে সবাই রাতে ঘুমুতে পারবে। নাটকে আমরা এও দেখতে পাই যে, জনগণের ধারণা- রাজার অস্বাভাবিক মৃত্যু, দুই ছেলের পলায়ন, দেহরক্ষীদের হত্যা, রাজার বিশ্বস্ত মানুষদের প্রতি ম্যাকবেথের মনোভাব ও ব্যবহার- এসব এখন আর আম জনতা সহজ ভাবে দেখছে না। তারা এখন ম্যাকবেথের সবকিছুকেই সন্দেহের চোখে দেখছে। আর জনগনের মনের আকাশে ঘৃণা ও তীব্র প্রতিবাদের কালো মেঘ জমছে।
১৯৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের চিত্রটা যেন ম্যাকবেথ নাটকের পুণরাবৃত্তি। যা থেকে পরিত্রাণ পেতে বাংলাদেশের জনগণকে দীর্ঘ ২১ বছর সময়কাল অপেক্ষা করতে হয়েছে। আজ বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এক এক করে সম্পন্ন হতে চলেছে, জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারও শুরু হতে যাচ্ছে। - বাংলাদেশ আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে পৃথিবীর বুকে, ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির পথ ধরে। যা বিজয়ের ৪৫ বছরের যাত্রায় এক অভাবিত ঘটনা! আর এই সফল যাত্রার মহা নায়ক, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা সংগ্রমে মহা নায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য জননন্দিত কন্যা- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আলী নিয়ামত:
সভাপতি, বাংলাদেশ উন্নয়ন সংবাদিক ও লেখক ফোরম এবং সম্পাদক, শিক্ষা প্রাক্তনী সংবাদ (এলামনাই নিউজ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।