চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্টদের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি)। এই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানটি পুরো ট্যানারি শিল্প ইন্সপেকশন করার পর সার্টিফাই করে। তাদের কাছ থেকে সার্টিফিকেট পেলে চামড়া রফতানিতে সমস্যায় পড়তে হয় না।
২০১৭ সালে আদালতের নির্দেশে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলোকে স্থানান্তর করা হয় সাভারের হেমায়েতপুরে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) গড়ে তোলা চামড়া শিল্প নগরীতে। ১৫৪টি কারখানাকে এই শিল্প নগরীতে জমি বরাদ্দ দেওয়া হলেও তিন বছরেও কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি সবাই। যারা উৎপাদন শুরু করেছেন, তারাও অবকাঠামোগত নানা সমস্যার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছেন। জানা গেছে, সাভারের চামড়া শিল্পনগরী এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত হতে পারেনি। চালু করা যায়নি স্থানান্তরিত সব ট্যানারি। খালি নেই চামড়া শিল্পনগরীর ডাম্পিং ইয়ার্ডও। সিইটিপি প্রস্তুত না হবার পাশাপাশি চামড়া কাটার পর বর্জ্য কোথায় ফেলা হবে সেটিও নির্ধারণ হয়নি। চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি আছে বর্তমানে ১৫৪টি। এর মধ্যে ১১৫টি উৎপাদনে সক্ষম। এছাড়া ঢাকার ট্যানারিগুলোর চামড়া প্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতাও কমে গেছে।
এলডব্লিউজি’র পরিদর্শন ও চামড়া রফতানির সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য সাভারের চামড়া শিল্প নগরী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রস্তুত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম, ট্যানারি শিল্পের কাজ ঠিক সেই ভাবেই হচ্ছে। এসময় তিনি ট্যানারির বর্জ্য (সলিড ওয়েস্ট) ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বলেন, হাজারীবাগে ট্যানারি থাকার সময় সলিড ওয়েস্ট নিয়ে কোনও সমস্যা ছিল না। এটি বাই প্রোডাক্ট। যারা বাই প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করে তাদের জন্য ট্যানারিতে কোনও জায়গা না রাখায় সলিড ওয়েস্ট বেড়ে যাচ্ছে। এর জন্য ট্যানারিতে জায়গা দিয়ে বিষয়টি খুব দ্রুত সমাধান করা হবে।
দেশে ট্যানারি নিয়ে সংকটের কারণে কমছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে আয় হয় ১১৩ কোটি ডলার। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে রফতানি আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১১৬ কোটি ডলারে। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এ আয়ের পরিমাণ আরও বেড়ে হয় ১২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। কিন্তু, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে রফতানি আয় অস্বাভাবিক কমে ১০৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। ওই অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১২ কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কম হয় ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় কমে ৬ দশমিক ০৬ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে চামড়া খাত থেকে ৮৩ কোটি ৭১ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। যদিও এ সময়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। এ হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৯ শতাংশ ও আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ আয় কমেছে।
আমরা আশা করি চামড়া শিল্প নগরী পুরোপুরি প্রস্তুত হলে এই সমস্যা কেটে যাবে। ডিসেম্বরের পরে এলডব্লিউজি’র সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে এবং এই খাত থেকে বড় ধরনের আয় করা সম্ভব হবে। তাই দ্রুত চামড়া শিল্প নগরী প্রস্তুতের কাজ শেষ হোক এবং কোনও অজুহাতে আর যেন দীর্ঘসূত্রিতা না হয়।