আশাশুনিতে বরগুনার গৃহবধু স্বপ্না পঁচিশ বছর পর পিতৃ পরিচয় ফিরে পেলেও বিচার হীনতায় আটকে আছে জন্ম পরিচয়। গত দু’বছর যাবত আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে বিচার চেয়ে অবশেষে ২৫ বছর পর পিতৃপরিচয় ফিরে পেয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছে না একটি মহল অভিযোগ স্বপ্নার।
স্বপ্নার পরিবার ও স্বপ্না বলেন, শ্রীউলা ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামের মৃত ওয়াজেদ আলী গাজীর ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আবদুস সত্তার তার পিতা। ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালিন সময়ে তার পিতা খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ছিলেন। খুলনা শিপিয়ার্ড তার মামার বাড়ি থেকে তিনি পড়ালেখা করতেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭৬ সালে অক্ষত অবস্থায় খুলনাতে ফিরে আসেন তার গর্বিত পিতা। তার মামা মোক্তার মীর শেফালির সাথে তার পিতার বিয়ে দেন। বিয়ের পর মাকে নিয়ে তিনি জন্মভূমি গাজীপুর নিয়ে আসেন। মা শেফালী গাজীপুৃর গিয়ে দেখতে পায় স্বামী আঃ সাত্তারের ফতেমা নামের আরেকটি স্ত্রী আছে। ৩ মাস ঘর সংসার করার পর সতিনের জ¦ালা সইতে না পেরে ৩ মাস গর্ভাবস্থায় খুলনায় ফিরে আসে। সেখানে স্বপ্নার জন্ম হয়। ভূমিষ্ঠের ২৫ বছর পরে মাতার মৃত্যুর সময় উল্লিখিত ইতিহাস তাকে অবগত করে তার মা। এরপর হতে জন্মদাতা পিতাকে পাগলের মত খুজতে থাকেন স্বপ্না। সর্বশেষ ২০১৫ সালে মাতার ঠিকানা অনুযায়ী পিতার বাড়ি গাজীপুর গেলে তাকে এক নজর দেখার জন্য শত শত গ্রামবাসী পিতার বাড়িতে উপচে পড়া ভীড় জমায়। ২৫ বছর পর জন্ম পরিচয় ফিরে পেয়ে ভাই বোনদের মধ্যে আবেগ অনুভুতিতে জড়িয়ে পড়ে, যার দৃশ্য এখনও ক্যামেরা বন্দি রয়েছে। বিধাতার নির্মম নিষ্ঠুর পরিহাসে তার পিতার মুক্তিযুদ্ধ কালিন ভাতা তার জীবনের কাল হয়ে দেখা দেয়। তার পিতার প্রথম স্ত্রীর ১ ছেলে ৫ মেয়ে আর দ্বিতীয় স্ত্রীর তিনি একা। তার ভাই লিটু যখন জানতে পারে তার পিতার মুক্তিযুদ্ধকালিন ভাতা দুইটা ভাগ হবে। সেই থেকে শুরু হয় বিরোধ। ২০১৮ সালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর বিরোধ নিরসনের জন্য আবদেন করলে বিষয়টি তদন্তের জন্য মৎস্য ও দারিদ্র বিমোচন কর্মকর্তাসহ তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয় যে, সাহানাজ পারভীন (স্বপ্না) বীর মুক্তিযুদ্ধ আবদুস ছাত্তারের কন্যা। সেটি মেনে না নিয়ে একের পর এক বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে হয়রানি অব্যাহত রেখেছে তার ভাই লিটু। তিনি ওই তার জন্মপরিচয় ফিরে পেতে জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। ওই বিষয়ে স্বপ্নার ভাই লিটুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিচার চেয়েছি বিচারে যেটা হবে আমি তা মেনে নেব। এর বেশী আমার বলার নেই।