দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই সড়কের কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। খানাখন্দে বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে সড়ক। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকলেও মাঠপর্যায়ে তা মানা হচ্ছে না। বিগত ২০১৫ সালে মন্ত্রণালয় থেকে ওই সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি হলেও দীঘ ৪ বছর পরও তা কার্যকর হয়নি। বিটুমিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফেরেনি। ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সড়কগুলো টেকসই হচ্ছে না। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশের সড়কগুলোতে বিদেশ থেকে আনা নি¤œমানের বিটুমিনের ব্যবহার হচ্ছে। ড্রামভর্তি করে ওসব বিটুমিন দেশে এনে গলিয়ে বাল্কে বিক্রি করা হচ্ছে। আগে চট্টগ্রাম বন্দরের আশেপাশে এ ধরনের বিটুমিন গলানো হলেও ইদানিং খোলা জায়গায় রীতিমতো চুল্লি বসিয়ে বিটুমিন গলানো হয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেদিকে নজর নেই। নি¤œমানের ইরানি পাতলা বিটুমিন অনেকটা নামমাত্র মূল্যে আমদানি করা হয়। দেশে আনার পর আমদানিকারকরা তা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি ও অন্য বৈধ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিটুমিনের চেয়ে কিছুটা সস্তা দামে বিক্রি করে। আর দামে সস্তা হওয়ায় অনেক ঠিকাদার ওই বিটুমিন ব্যবহার করে। ওসব বিটুমিন দেখতে অতি কালো। ফলে আপাতদৃষ্টিতে কার্পেটিংয়ের পরে দেখতে অনেক ভালো মনে হয়। ফলে শুকনো মৌসুমের কিছুদিন সড়ক ভালোও থাকে। কিন্তু বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই তা দ্রুত গাড়ির চাকার সঙ্গে উঠে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। আবার অতিরিক্ত গরমে গলে গিয়েও সড়কের ওপরের কার্পেটিং এবড়োথেবড়ো হয়ে যায়।
সূত্র জানায়, বর্ষার শেষে সড়ক সংস্কারের লক্ষ্যে একযোগে কাজ শুরু করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও বিভিন্ন সিটি করপোরেশন এবং পৌর কর্তৃপক্ষ। সেজন্য নি¤œমানের বিটুমিন আমদানিকারকরা এই সময়টিকেই বেছে নিয়েছে। বাংলাদেশে বছরে বিটুমিনের চাহিদা প্রায় চার লাখ টনের মতো। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি (ইআরএল) উৎপাদন করে ৭০ হাজার টনের মতো। বে-টার্মিনালসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বৈধভাবে বাল্কে বিটুমিন আমদানি করে থাকে। ইআরএল ও বে-টার্মিনাল বিটুমিনের গুণগত মান ঠিক রেখেই তা বাজারজাত করে।
সূত্র আরো জানায়, ড্রাম বিটুমিন আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু নজরদারির অভাবে ওসব বাধ্যবাধকতা আমদানিকারকরা মানছে না। তাছাড়া ড্রামভর্তি বিটুমিন গলানোর ক্ষেত্রে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের নিয়ম মানা হচ্ছে না। বিটুমিন গলানোর সময় অগ্নিকা-ের ঝুঁকি থাকে। কারণ আগুন লাগলে নি¤œমানের এই ধরনের বিটুমিন দ্রুত গলে যায়। আর এই বিটুমিনের আগুন পানি দিয়ে নেভানো যায় না, ফোম দিয়ে নেভাতে হয়। কিন্তু দেশে বিমানবন্দরগুলোর বাইরে ফোম দিয়ে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা অপ্রতুুল।
এ প্রসঙ্গে ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আক্তারুল হক জানান, সড়কের কার্পেটিং অনেক কারণে নষ্ট হতে পারে। তবে গুণগত মানসম্পন্ন বিটুমিন ব্যবহার হলো প্রধান শর্ত। শোনা যায় কিছু আমদানিকারক উলটা-পালটা বিটুমিন দেশে আমদানি করে গলায়। এ ব্যাপারে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।