বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অথবা দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের মিশ্র চিরহরিৎ বন ও গরান বনাঞ্চলের অতি বিরল প্রজাতির একটি অজগর ধরা পড়েছে লোকালয়ে। একটি খোলা জায়গায় বসে কয়েক যুবক আড্ডা দিচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শী নৌশাদ জানায়, বাঁশঝাড়ের পাশ দিয়ে গাছের গুড়ির মতো এঁকে-বেঁকে কিছু একটি চলতে দেখে চোখ আটকে যায় একজনের, একে একে সকলের চোখ পড়ে ওটার দিকে। দ্রুতলয়ে পাশের একটি খড়ের গাঁদার নিচে গিয়ে ঘাপটি মেরে যায় সাপটি। এদের একজন দৌড়ে বাড়ি থেকে টেটা নিয়ে এসে বিষধর সাপ মনে করে দ্রুতই টেটা দিয়ে সাপটির মাথায় বসিয়ে দেয়। টেটাবিদ্ধ আস্ত সাপটি টেনে বের করার পর তাদের চোখ চড়কগাছ; অজগর! ১৫ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১২ কেজি ওজনের পুরুষ অজগরটির বয়স দুই বছর এবং এটি ওজানের পানিতে ভেসে আসতে পারে বলে ধারনা করেছেন বন বিভাগ।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লার হোমনা পৌর এলাকার বাগমারা গ্রামের ২ নং ওয়ার্ড কমিশনার আবুল হোসেনের বাড়ির খড়ের গাঁদা থেকে এটিকে উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। অজগরটি যেখানে পাওয়া যায়, তার অনতি দূরে একটি পানির জলা (খালের মতো) প্রবাহমান এবং একটি পুরনো বাঁশঝাড় রয়েছে।
পৌর কমিশনার আবুল হোসেন জানান, ছেলেরা বসে আড্ডা দেওয়ার সময় বড় বিষধর সাপ মনে করে তারা অজগরটিকে টেটা দিয়ে আক্রমণ করে। পরে তারা এটিকে প্রশাসনকে খবর দিয়ে বন বিভাগের কাছে তুলে দেয়।
স্থানীয় যুবকদের সহায়তায় টেটাবিদ্ধ অজগরটি রাতেই উপজেলা পশু সম্পদ কার্যালয়ে নেওয়া হলে এটিকে ব্যথানাশক ও আনুষঙ্গিক প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে বন বিভাগের মাধ্যমে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে কুমিল্লা চিড়িয়াখানায় হস্তান্তর করা হয়।
ইউএনও তাপ্তি চাকমা বলেন, আমরা প্রাণিবৈচিত্র রক্ষা করার স্বার্থেই অজগরটিকে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থার করে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছি।
হোমনা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সৈয়দ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয়ভাবেই টেটা খুলে রাত সাড়ে এগারোটার দিকে আজগরটি হাসপাতালে নিয়ে আসে। অজগরটি মারাত্মকভাবে মাথায় জখম হয়েছে। আমরা প্রথমেই এটিকে ব্যথানাশক ওষুধ এবং আনুষাঙ্গিক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বন বিভাগের মাধ্যমে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে পাঠিয়ে দিই।
আজগরটির চিকিৎসা দেওয়া জেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. নাজমুল জানিয়েছেন, মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত আজগরটিকে আমাদের সাধ্যমতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়েছি। এখনও এটি বেঁচে আছে। তবে আশঙ্কামুক্ত নয়। বন বিভাগ এটিকে চিড়িয়াখানায় হস্তান্তরের মাধ্যমে আরও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে।
উপজেলা ফরেস্টার ফজলে রাব্বী বলেন, খবর পেয়ে আমরা আজগরটি জেলা সদরে নিয়ে এসে আরও চিকিৎসা দিয়েছি। এটি বর্তমানে সুস্থ হতে চলেছে। চিড়িয়াখানায় হস্তান্তর করেছি।