আবু নাছের নামের এক বছর বয়সী শিশুকে চিকিৎসা না দিয়ে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা অজয় সাহার বিরুদ্ধে। নিজে প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকার কথা জানিয়ে রোগীকে নিয়ে হাসপাতালের বহিঃবিভাগে দায়িত্বপালনরত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
নাছোড় বান্দা পিতা মাতা ওপেন হার্ট সার্জারী করা তাদের শিশু সন্তানকে একবারের জন্য দেখে পরামর্শ দিতে বার বার অনুরোধ করলে তিনি তাতে কর্নপাত করলেন না। বরং জানিয়ে দেন বেলা আড়াইটার পরে ব্যক্তিগত চেম্বারে নিয়ে যেতে। অগত্যা তীব্র শ^াষকেষ্ট ভুগতে থাকা শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তারা শ্যামনগর হাসপাতাল ছেড়ে যান।
হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার বেলা দশটার দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। যদিও আলোচিত চিকিৎসক কর্মকর্তার দাবি তিনি অসুস্থ শিশুকে নিয়ে বহিঃবিভাগে দায়িত্ব পালনরত চিকিৎসকের কাছে দেখানোর পর রেফার্ড করে তার কাছে নিয়ে আসতে বলেছিলেন।
জানা গেছে বৃহস্পতিবার সকালে মারাত্বক শ^াষকষ্টে ভুগতে থাকা নিজেদের এক বছর বয়সী শিশু পুত্র আবু নাছেরকে নিয়ে হারুন-অর রশিদ ও ফাতিমা খাতুন দম্পতি শ্যামনগর হাসপাতালে পৌছান। শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচএ অজয় কুমার সাহা শিশু বিশেষজ্ঞ হওয়ায় তারা শিশু সন্তানকে নিয়ে পাশর্^বর্তী কালিগঞ্জ উপজেলার কদমতলা দুলোবালা গ্রাম থেকে তার কাছে যান।
এসময় শিশুটির পিতা মাতা তাদের সন্তানের প্রচন্ড শ^াসকষ্টের কথা জানিয়ে তাকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য অজয় সাহার নিকট আকুতি জানান। কিন্তু তিনি প্রশাসনকি দায়িত্ব পালন করেন - জানিয়ে বাইরে থেকে টিকিট সংগ্রহ করে বহিঃবিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার কথা বলেন।
জানা যায় এ সময় শ^াষকষ্টে ভুগতে থাকা শিশুটির পা ভাঁজ হয়ে কপালের কাছে যেতে দেখেও াজয় সাহা তার চিকিৎসা না দিয়ে বহিঃবিভাগে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এ সময় শিশুটির পিতা মাতা অনেক দূর থেকে তাকে দেখানোর জন্য এসেছেন - বলে অবহিত করলে তিনি বেলা আড়াইটার পর সন্তানকে নিয়ে তার চেম্বারে যাওয়ার জন্য বলেন।
এক পর্যায়ে অফিস ক্ষ থেকে বের করে দেয়ার পর দরজার পাশে দাড়ানো টিএইচএ’র নয়ন নামের ব্যক্তিগত সহকারী ৪০০ শত টাকা নিয়ে আড়াইটার পরে দেখা করার কথা স্মরন করিয়ে দেন। একপর্যায়ে নিরুপায় দম্পতি তাদের কোলের সন্তানকে নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে বেরিয়ে আসার পথে প্রচন্ড কান্নায় ভেঙে পড়লে উৎসুক জনতা সেখানে ভীড় করলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
অসুস্থ শিশু আবু নাছেরের পিতা হারুন-অর রশিদ জানান, ছয় মাস আগে তার এক বছর বয়সী শিশুকে ভারতের ব্যাঙ্গালোরে নিয়ে দেবী শেঠী বাবুর নিকট থেকে ওপেন হার্ট সার্জারী করা। হার্টে দু’টি ছিদ্র থাকায় বৃহস্পতিবার সকালে পুনরায় শ^াষকষ্ট শুরু হলে তারা ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে শ্যামনগরের টিএইচএ অজয় সাহা শিশু বিশেষজ্ঞ জানতে পেরে বেলা দশটার দিকে সন্তানকে নিয়ে তার শরনাপন্ন হন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, নিজে প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলান- জানিয়ে টিকিট কেটে অন্য চিকিৎসককে দেখাতে বলেন। একপর্যায়ে বার বার অনুরোধ করা হলে বেলা আড়াইটার পরে চেম্বারে দেখানোর পরামর্শ দিয়ে তাদেরকে বের করে দেয়া হয়। এ সময় তার দরজার পাশে দাড়ানো সহকারী চেম্বারে দেখাতে চাইলে চারশত টাকা নিয়ে আসার পরামর্শ দেন। হাসপাতালের গেটে ক্রন্দনরত শিশু আবু নেছারের মাতা ফাতেমা বেগম জানান, মানুষের জন্য নিয়ম কানুন, নাকি নিয়ম কানুনের জন্য মানুষ তা আমার বোধগম্য নয়। প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকলেও প্রচন্ড শ^াষকষ্টে ভুড়তে থাকা এক বছরের শিশুকে একটু দেখলে তার কোন অসুবিধা হতো না হয়ত। তিনি আরও বলেন, ওপেন হার্ট সার্জারী করা শিশুটিকে চিকিৎসা না দিয়ে তিনি যদি সঠিক কাজ করে থাকেন তবে তার কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু যদি তার সন্তানের সাথে যথাযথ ব্যবহার না হয়ে থাকে তবে তিনি অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।
যদিও এ বিষয়ে টিএইচএ অজয় কুমার সাহা জানান, তিনি শিশুটিকে বহিঃবিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।