পৃথিবীর সব দেশেই ধনী-গরিব আছে, থাকবে। থাকবে কিছুটা আয়বৈষম্যও। তবে তার একটা মাত্রা আছে। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে ধনী-গরিবের আয়বৈষম্য মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে চলেছে। দিনে দিনে বৈষম্য আরো বাড়ছে। এ বৈষম্য যদি না কমে, তাহলে এটা দেশের অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত বলে আমরা মনে করছি। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক গবেষণায় এসেছে, দেশে সবচেয়ে গরিব প্রায় পৌনে ২০ লাখ পরিবারের প্রতি মাসের গড় আয় মাত্র ৭৪৬ টাকা। এ হিসাবে দেশে গরিব পরিবার পাঁচ শতাংশ। একইভাবে সবচেয়ে ধনী পরিবার পাঁচ শতাংশ। দেশে ধনী পরিবার রয়েছে ১৯ লাখ ৬৫ হাজার। যাদের মাসিক গড় আয় ৮৯ হাজার টাকা। এ প্রেক্ষিতে দেশের সবচেয়ে হতদরিদ্র পরিবারের চেয়ে সবচেয়ে ধনীরা প্রায় ১১৯ গুণ বেশি আয় করে। আয়ের এ গুণিতক হারে এতো বৈষম্য চলতে থাকলে একসময় বাংলাদেশের অর্থনীতি কিছু পরিবারের কাছে জিম্মি হয়ে যাবে। যা দেশের সামগ্রীক অর্থনীতির জন্য খুবই খারাপ হবে।
সরকার প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু দেশের সামগ্রিক আয়-ব্যায়ের ব্যালেন্স না হলে, ধনী-গরিবের মধ্যে অতি দ্রুত বিশাল ফারাক সৃষ্টি হবে। এটা অর্থনীতির জন্য কোনোক্রমেই ভালো দিক নয়। অন্যদিকে দেশের বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, সেটা আমাদের কমাতে হবে। পাশাপাশি ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কাজের সুযোগ আরও বাড়াতে হবে।
বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৯৩ লাখ ২৯ হাজার পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গরিব পাঁচ শতাংশ বা ১৯ লাখ ৭২ হাজার ৩২টি পরিবারে সাড়ে ৬১ লাখ সদস্য রয়েছে। তাদের মধ্যে উপার্জনকারীর সংখ্যা সাড়ে ১৫ লাখ। এই দরিদ্র শ্রেণির প্রতি পরিবারের মাসিক গড় আয় ৭৪৬ টাকা। এই হলো দেশের সবচেয়ে গরিব মানুষের আয়ের চিত্র। অবশ্য এটি ওই সব পরিবারের প্রকৃত আয় নয়। ওই সব পরিবারের মোট আয়কে পরিবার প্রতি ভাগ করে এ হিসাব করা হয়েছে। পরিসংখ্যানে গত ৬ বছরে বাংলাদেশের মানুষের আয় ও সম্পদ বৈষম্য বেড়েছে। কোনো দেশের গিনি সহগ (অর্থনীতির বৈষম্য মাপার সূচক) শূন্য দশমিক ৫০-এর বেশি হলে সে দেশকে উচ্চ বৈষম্যের দেশ হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশ এর কাছাকাছি রয়েছে।
আরেকটি বিষয় হলো, দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান যে অভিযান চলছে, সেটা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ধনী-গরিবের মধ্যে আয়বৈষম্য কমে আসবে। দুর্নীতির বিষয়টা অবশ্যই নীতি নির্ধারকদের খেয়াল রাখতে হবে। এটা বৈষম্যের অন্যতম কারণ। গরিব পরিবার যেন কাজের সুবিধা পায় সে দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি সুশাসন বাড়াতে হবে এবং দুর্নীতি কমাতে হবে। তা হলেই ধীরে ধীরে এ বৈষম্য কমে আসবে বলে আমরা আশা করি।