ইঁদুর প্রতিবছর দেশে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টন খাদ্যশস্য নষ্ট করে। যার বাজার মূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা। শুধু তাই নয় ইঁদুর একটি চতুর, নীরব ধ্বংশকারী, জনস্বাস্থ্য ও নিরাপদ পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরুপ। এটি মানুষের অন্যতম শত্রু। ১৭০০টি ইঁদুর জাতীয় প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে ২২টির অধিক ক্ষতিকারক প্রজাতি সনাক্ত করা হয়েছে। যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষের ফসল, গোলার শস্য, বাগানের ফলমূল, ঘরে রাখা খাবার, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, বাঁধ, রেললাইন, সড়ক, সেচ-নালা, আসবাবপত্র, টাকা, কাপড়-চোপর ইত্যাদি নষ্ট করে থাকে।
বুধবার শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আয়োজিত ইঁদুর নিধন অভিযান ২০১৯ এর উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। শ্রীমঙ্গল কৃষি অফিসের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো: সিপন মিয়া মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে ইঁদুরের ক্ষতিকর দিক নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের আয়োজনে উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রকেন্দ্র শর্ম্মার সঞ্চালনায় সভাপতি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব। বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: জাকিরুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র নাথ ও ইঁদুর নিধনে গতবছরের পুরষ্কারপ্রাপ্ত কৃষক মো: নাজমুল হাসান।
প্রসঙ্গত: ১০ অক্টোবর থেকে আগামি ৯ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান চলছে। এরই অংশ হিসেবে বুধবার শ্রীমঙ্গলে ইঁদুর নিধন অভিযান ২০১৯ এর উদ্বোধন করা হয়। উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ইঁদুর বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা খাদ্য ও সম্পদ নষ্ট করে এবং জনস্বাস্থ্য ও নিরাপদ পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরুপ।
এ কারনে- ‘আসুন, সম্পদ ও ফসল রক্ষায় সম্মিলিতভাবে ইঁদুর নিধন করি’- এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়, ফসল ও সম্পদ বিনষ্ট ছাড়াও ইঁদুর বাহিত রোগের সংখ্যা ৩৩ এর অধিক। প্লেগ রোগও ইঁদুরের কারণে হয়ে থাকে। যুগে যুগে প্লেগ মহামারি রুপে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এ ক্ষুদ্র প্রাণিটি। এরা দ্রুত বংশবিস্তার করে থাকে। একজোড়া ইঁদুর থেকে বছরে তিন হাজার ইঁদুরের জন্ম হয়। এর বংশবৃদ্ধির হার অত্যন্ত বেশী।
অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়, ইঁদুরের উপদ্রপে আমন ধানে ৫-৭%, গমে ৮-১২%, গোল আলুতে ৫-৭%, আনারসে ৬-৯%, তরমুজে ৬-৭ %, শাক-সবজিতে ৪-৫%, নারিকেলে ৮-৯%, সেচ-নালায় ৭-১০% ক্ষতি করে থাকে।
অনুষ্ঠানে কৃষি অধিদপ্তরের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, উপজেলার ৯ ইউনিয়নের কৃষক, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে চাষীদের সম্মিলিতভাবে ইঁদুর নিধন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। উপজেলায় ৯ ইউনিয়নে সর্বোচ্চ ইঁদুর নিধনকারীদেরকে পুরষ্কার প্রদানের ঘোষনা দেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব। এছাড়াও অঞ্চল ও জাতীয় পর্যায়েও সর্বোচ্চ ইঁদুর নিধনকারীগণকে পুরষ্কৃত করা হবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।