কুড়িগ্রাম জেলার ভাঙ্গন আর বন্যা কবলিত একটি এলাকা চিলমারী। প্রতি বছরই বন্যার আর ভাঙ্গনের কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন গ্রামসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছরই প্রতীকূল পরিবেশের কারণে যেমন যেগেছে নতুন চর তেমনি ছিন্নভিন্ন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। এই ভাঙ্গনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বাদ যাচ্ছেনা। ফলে দিশাহারা হয়ে পড়ছে চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। সঠিক পদক্ষেপ আর নজরদারির অভাবে পিছিয়ে পড়ছে চরাঞ্চলের ছেলে মেয়েরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে যাওয়ায় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার আমতলা চরসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলের ২শত শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের আমতলা চরে প্রায় ৪শতাধিক পরিবারের বসবাস। ভাঙ্গনের শিকার হয়ে পরিবার গুলো বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে আমতলা চরে এসে আবাস গড়ে তোলে কয়েক বছর থেকে। পরিবারের সাথে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত প্রায় ২শতাধিক শিক্ষার্থীরাও চলে আসে ওই চরে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও ভাঙ্গনের শিকার হয়ে অন্য চরে চলে যাওয়ায় আমতলা চরের আশপাশের চরের শিক্ষার্থীরাও এখন দিশাহারা।
শিক্ষার্থী আফছানা জানায়, তারা ইতোপূর্বে লাল চামার চরে বসবাস করতো নদী ভাঙ্গনে তা বিলিত হওয়ায় পরিবারসহ আমতলা চরে আশ্রয় নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করছে। কিন্তু এই চরে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় পড়শুনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
নাজিম, মাফিয়া, মর্জিনা বলেন, এই চরে স্কুল না থাকায় আমরা কয়েকজন মিলে নৌ-থানা পরিচালিত একটি স্কুলে যাই। ঐ স্কুলে যেতে নৌকায় প্রায় ১ঘন্টা সময় লাগে এছাড়াও ভয় তো আছেই। সাজু, আসিফ বলেন আমাদের চরে স্কুল না থাকায় অন্য এলাকায় যেতে হয় এইজন্য ভোর বেলায় বের হতে হয় না হলে ক্লাস মিস হয়। রুবেল নামে অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, এখানে স্কুল না থাকায় আমি এখন বাড়ির কাম করি, অন্যের গরু চড়াই, মাঠেও কাম করি। স্কুলে যেতে না পাড়ায় এখন বাড়িতে কাজ আর খেলায় সময় পাড় করছে আফছানা।
শুধু রুবেল, আফছানা নয় তাদের মত অনেক শিক্ষার্থীরা এখন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে কোমলমতি ছেলে মেয়েরা এখন বিভিন্ন কাজে জড়িত হয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয় দিনে দিনে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত সংখ্যা বেড়েই চলছে আর তারা দু’চোখে দেখছে ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
সাহের আলী, আকবর আলীসহ অনেকে জানান, এই চরে প্রায় ৪শতাধিক পরিবারের বসবাস এছাড়াও এখানে দুটি আশ্রয়ণ কেন্দ্রও গড়ে উঠেছে। এখানে একটি অন্তত প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলা দরকার তা না হলে শতশত শিক্ষার্থী আর ছেলে মেয়েরা বঞ্চিত হবে শিক্ষা থেকে আর জড়িয়ে পড়বে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে। এ সময় এলাকাবাসী আমতলা চরে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার দাবি জানান এবং প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করেন।
সহকারী শিক্ষক এনামুল হক বলেন, আমতলা চরটি গড়ে উঠার বেশ কয়েক বছর হলো। এখানকার ছেলে মেয়েরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই চরের ছেলে মেয়েরা যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় এইজন্য এই চরে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়া খুবই প্রয়োজন।
এব্যাপারে কুড়িগ্রাম-৪ (চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর) আসনের সংসদ সদস্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন (এমপি) সাথে কথা হলে তিনি জানান, আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষা বান্ধব সরকার। শিক্ষা থেকে কোন এলাকার ছেলে মেয়ে কিংবা শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে না পড়ে সে দিকে আমাদের নজর আছে। এবং আমতলা চরে শিক্ষার্থীরা যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হন সেদিকে আমাদের নজর থাকবে প্রয়োজনে সেখানে নুতুন করে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে।