সরকার দেশের ৭৪টি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র-এমডিএসপি (১ম সংশোধিত)’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। চট্টগ্রাম ও বরিশাল- ওই দুই বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেণী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীর ৭৪টি উপজেলায় ওসব আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি হবে। মূলত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জানমাল রক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, প্রাথমিক শিক্ষা বা অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি, স্বল্প মেয়াদি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক ও সরকারি কর্মসূচির জন্য নতুন করে ওসব আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ৩ হাজার ১৭০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) নতুন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। মোট প্রকল্প ব্যয়ের অনুমোদিত অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। তার মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১০ কোটি টাকা এবং বিশ্বব্যাংক থেকে প্রকল্প ঋণ বাবদ পাওয়া যাবে ৩ হাজার ১৬০ কোটি ৭৬ টাকা। প্রকল্পটি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) মোট ৫০০ কোটি টাকা, সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য বাবদ ৪৯৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সূত্র জানায়, ৯টি জেলার ৭৪টি উপজেলায় নতুন যেসব আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি হবে সেগুলো হলো- বরিশাল জেলার বরিশাল সদর, বাবুগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, উজিরপুর, বানারিপাড়া, গৌরনদী, হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ ও মুলাদী। ভোলা জেলার ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন, চরফ্যাশন, দৌলতখান, লালমোহন, মনপুরা ও তজুমুদ্দিন। পটুয়াখালী জেলার পটুয়াখালী সদর, বাউফল, দশমিনা, দুমকী, গলাচিপা, কলাপাড়া, মির্জাগঞ্জ, ও রাঙ্গাবালী। পিরোজপুর জেলার পিরোজপুর সদর, ভান্ডারিয়া, ইন্দুরকানি, কাউখালী, মঠবাড়িয়া, নাজিরপুর ও নেছারাবাদ। চট্টগ্রাম বিভাগের আনোয়ারা, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, কর্ণফুলী, লোহাগড়া, মিরসরাই, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, সন্দ্বীপ, সাতকানিয়া ও সীতাকু-। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, কক্সবাজার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, রামু, টেকনাফ ও উখিয়া। ফেনী জেলার ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, দাগনভূঁঞা, ফুলগাজী, পরশুরাম ও সোনাগাজী। লক্ষ্মীপুর জেলার লক্ষ্মীপুর সদর কমলনগর, সদর, রামগঞ্জ, রামগতি ও রায়পুর। নোয়াখালী জেলার নোয়াখালী সদর, বেগমগঞ্জ, চাটখিল, কোম্পানীগঞ্জ, হাতিয়া, কবিরহাট, সেনবাগ, সোনাইমুড়ি ও সুবর্ণচর। প্রকল্পের আওতায় মোট ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি হবে ৫৫৬টি। আর বিদ্যমান ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন (হরাইজোন্টাল ও ভার্টিক্যাল সম্প্রসারণসহ) করা হবে ৪৫০টির। তাছাড়া ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র সংযোগকারী ১৮২ কিলোমিটার সড়ক ও ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ করা হবে।
এদিকে প্রকল্প সংশোধনের কারণ সম্পর্কে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, হালনাগাদ রেট সিডিউল সমন্বয়ের কারণে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের তারতম্য, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের মেরামত ও পুনর্বাসন, সোসাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যয় হ্রাস, বিভিন্ন অংশের ব্যয় হ্রাস, ফিজিক্যাল ও প্রাইস কন্টিনজেন্সি খাতের সমন্বয়, প্রকল্পের পূর্ত অংশের ৩টি প্যাকেজে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের (পটুয়াখালীর-৩৬টি, পিরোজপুরের-৫০টি এবং ভোলা জেলার ৯৭টি শেল্টার) ক্রয় প্রস্তাব চলতি বছরের ২৭ মার্চ সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিজিপি)তে উত্থাপন করা হলে সিসিজিপির সুপারিশ অনুযায়ী তা সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি)-তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, প্রকল্পটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায় ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রমে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র তৈরির বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় গৃহীত কার্যাদি বাস্তবায়ন করা হলে ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের উদ্দেশ্যগুলো ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
এ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, সরকার দুর্যোগ মোকাবেলায় সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রকল্প তারই অংশ। যে কোনো দুর্যোগে দেশের উপকূলবাসীলা যেন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় উঠতে পারে, সেভাবেই সেগুলো তৈরি হবে।