কিছুদিন আগ পর্যন্তও শারীরিক সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য ব্যয়বহুল কসমেটিক সার্জারি ছিল একমাত্র ভরসা। ছবিতে নিজেকে সুন্দর দেখানোর সেই খরচ এক ধাক্কায় নামিয়ে এনেছিল ইনস্টাগ্রামের বিভিন্ন ফিল্টার! তবে, সে দিন ফুরালো! হ্যা, ওই ফিল্টার দিয়ে স্থায়ী সৌন্দর্যবর্ধন হয়তো হতো না, তবে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা ছবিতে নিজেকে সুন্দর দেখানোর জন্য অনেকই বেশ আগ্রহ নিয়েই ব্যবহার করতেন কসমেটিক সার্জারির ইফেক্ট দেওয়া নানারকম ফিল্টার। এখন থেকে সেটি আর হচ্ছে না। কসমেটিক সার্জারির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ধরনের অগমেন্টেড রিয়ালিটি (এআর) ফিল্টার এবং ইফেক্টের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইনস্টাগ্রাম --খবর বিবিসি’র। ব্যবহারকারীদের ‘মানসিক স্বাস্থ্যের স্বার্থে’ এগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সেবাটি। কিন্তু কেন সরিয়ে নেওয়া হলো জনপ্রিয় ওই ফিচার? কারণ, গবেষণায় দেখা গেছে, চেহারায় ভার্চুয়াল পরিবর্তন আনতে সক্ষম ওই ফিল্টারগুলো মানুষের মধ্যে হীনমন্যতার অনুভূতি তৈরি করতে পারে। ফলে, ফিল্টার সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে স্বাস্থ্যবান্ধব সিদ্ধান্ত হিসেবেই দেখছে ফেইসবুক মালিকানাধীন ফটো শেয়ারিং সেবাটি। চলতি বছরের অগাস্টে ইনস্টাগ্রাম অ্যাপে আসা নতুন এক আপডেটের বদৌলতে নিজেদের ছবি ও ভিডিওতে বসানোর জন্য কাস্টম ফেইস ফিল্টারের মতো ভার্চুয়াল ইফেক্ট তৈরি করতে পারছিলেন ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীরা। এ ছাড়াও ইনস্টাগ্রামে প্রচলিত জনপ্রিয় ফিল্টার ‘প্লাস্টিকা’, ‘ফিক্স মি’ ইত্যাদি ছবিতে বসিয়ে নিজেদের ছবিকে অবাস্তব রূপ দেওয়া শুরু করেছিলেন তারা। প্লাস্টিকার সাহায্যে অতিমাত্রার কসমেটিক সার্জারি করলে চেহারা কেমন দেখাবে সে ধরনের ছবি, আর ফিক্সমি’র সাহায্যে কসমেটিক সার্জারির আগ মুহূর্তে চিকিৎসক যে অংশগুলো মার্কার কলম দিয়ে যেভাবে চেহারার বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত করে দেন সেটি দেখায়। ইনস্টাগ্রামের নতুন এ সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে ফিক্সমি ফিল্টারের নির্মাতা ড্যানিয়েল মুনি বলেন, “ইনস্টাগ্রাম ঠিক কী কারণে এটি করছে তা বুঝতে পারছি। কিন্তু এতে আখেরে লাভ হবে না। ইনস্টাগ্রামে সবচেয়ে ব্যবহারকারী অনুসরণ বা ফলো করেন এমন অ্যাকাউন্ট মালিকরাই নিজেদের চেহারা সার্জারির সাহায্যে ‘উন্নত’ করেছেন। ফলে কসমেটিক সার্জারির ফিল্টার সরিয়ে কোনো লাভ নেই। এদিকে নিজের তৈরি ফিল্টার প্রসঙ্গে মুনি জানিয়েছেন, প্লাস্টিক সার্জারির সমালোচনা করার উদ্দেশ্যেই তৈরি হয়েছিল ফিক্সমি। এর মূল উদ্দেশ্য ছিলো কসমেটিক সার্জারির তুলনামুলক খারাপ দিকগুলো ফুঁটিয়ে তোলা। এটি যে আদতে চটকদার কোনো বিষয় নয়, তা তুলে ধরা। ইনস্টাগ্রাম জানিয়েছে, সব ফিল্টার সরিয়ে নিতে ঠিক কতোটা সময় লাগবে, তা এখনও অনিশ্চিত। এদিকে অনেক ব্যবহারকারীই ইনস্টাগ্রামের এ পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। বিবিসি উল্লেখ করেছে, এরইমধ্যে বেশ কিছু ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী ফিল্টারগুলোর অনুপস্থিতি অনুভব করবেন জানিয়ে টুইট করেছেন। ২০১৭ সালে ফটো শেয়ারিং প্লাটফর্মটিতে ক্ষতিকর গ্রাফিক ছবি দেখার পর আত্মহত্যা করেন ১৪ বছর বয়সী মলি রাসেল। পরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইনস্টাগ্রামের পক্ষ থেকে জানানো হয়, স্বল্পবয়সী ব্যবহারকারীদের স্বার্থে এ ধরনের কনটেন্ট সরানো শুরু করেছে তারা।