চট্টগ্রামে নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিনকে দলের প্রতিনিধি সভার মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়ার ঘটনায় তোলপাড় চলছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে ক্ষমা চাওয়ার সময় বেঁধে দিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি আলহাজ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুগতরা। সোমবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তারা ওই আল্টিমেটাম দেন। সেই আল্টিমেটামের সময় মঙ্গলবার বিকালে শেষ হয়েছে। এরইমধ্যে আ জ ম নাছির উদ্দীন ক্ষমা চাননি। এতে করে উভয় নেতাদের অনুসারীদের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
এতে যে কোন সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। ওদিকে আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা বলছেন, সিটি মেয়রের চৌকস নেতৃত্বে ঈর্ষান্বিত হয়ে গুটিকয়েক রাজনৈতিক নেতারা নোংরা রাজনীতিক খেলায় মেতে উঠেছেন। সোমবার সন্ধ্যায় বিকালে চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল কনভেশন হলে সম্পন্ন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা জানে আলম দোভাষের স্মরণ সভায় মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী এবং আ জ ম নাছিরের অনুসারীদের মুখোমুখি অবস্থান করতে দেখা গেছে। এ সময় স্মরণসভার পরিবেশ ছিল থমথমে। কোতোয়ালী থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদেরকেও সতর্ক অবস্থানে থাকায় শেষ পর্যন্ত কোন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেনি। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশে নগর যুবলীগ নেতা একরামুল হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী আমাদের আবেগের জায়গা। তিনি আমাদের আবেগের জায়গায় আঘাত করেছেন। এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই সমস্যার সমাধানের দাবি জানাচ্ছি। নগর যুবলীগ নেতা নেছার আহমদ বলেন, আমরা আলহাজ এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসতাম।
একইভাবে তার পরিবারকেও ভালবাসি। সিটি মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রীকে অপমান করে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগকে চরম অসম্মান করেছেন। যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের মা এই হাসিনা মহিউদ্দিনকে অপমান করা আমরা মেনে নিতে পারিনা। নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, আজকের সমাবেশ দানব মুক্তির সমাবেশ। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে অপশক্তি অবসানের সমাবেশ। গত তিন-চার বছর ধরে চট্টগ্রামে খুনের রাজনীতি হচ্ছে। সুদীপ্ত, দিয়াজ, নাসিম আহমেদ সোহেল খুন হয়েছে। কোনো খুনেরই বিচার হয়নি। এসব খুনিদের গডফাদার শুধু একজন। চট্টগ্রামের রাজনীতি থেকে সেই গডফাদারকে নির্মূল করতে হবে। সিটি মেয়রের উদ্দেশে রনি বলেন, ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করব। ক্ষমা না চাইলে। বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। সমাবেশে কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান মনসুর, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল, শ্রমিক লীগ নেতা আবুল হোসেন আবু, ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য উম্মে হাবিবা, যুবলীগ নেত্রী আঞ্জুমান আরা, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দিনসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ রাজনীতি করতে চাই। তাছাড়া হাসিনা মহিউদ্দিনের পক্ষ থেকে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কারণ দলীয় ফোরামের সিদ্ধান্ত দলের সবাই জানেন। প্রসঙ্গত, গত রোববার চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের দলীয় এক প্রতিনিধি সভায় মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। একই সময় নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুস ছালামকেও মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। পরে তারা অপমান বোধ করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। এরপর থেকেই চট্টগ্রাম শহরে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীদের দফায় চলছে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ।