নওগাঁর মান্দায় ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজে শতশত গরু আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে মারা গেছে বেশ কিছু আক্রান্ত গরু। এতে খামারি ও গরু পালনকারীরা আতঙ্কিত ও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ রোগটি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর বলছে, ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এতে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। সময়মত সঠিক চিকিৎসায় এ রোগে আক্রান্ত গরু সুস্থ হয়ে উঠবে। তবে, এ রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩টি গরু মারা যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
গরু পালনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গরুর গায়ের চামড়ার নিয়ে প্রথমে বসন্তের মতো গুটি গুটি দেখা যায়। দুই-এক দিনের মধ্যেই তা পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। গুটিগুলো একসময় ঘায়ে পরিণত হচ্ছে। এ সময় গরুর শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা দেখা দিচ্ছে এবং গরু খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিচ্ছে। অনেক সময় গরুর পা ফুলে যাওয়াসহ বুকের নিচে পানি জমে ক্ষতের সৃষ্টি হচ্ছে। ক্ষতস্থান থেকে মাংসও খসে খসে পড়ছে বলে উল্লেখ করেন তারা।
উপজেলার মৈনম ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের গরু পালনকারী এরশাদ আলী, হাফিজুর রহমান, মিরাজুল ইসলাম ও সুজন জানান, আমাদের পালিত গরুগুলোর গায়ে গুটি গুটি বসন্তের মতো বের হয়েছে। বাছুরসহ কয়েকটি গরুর পা ফুলে গেছে। পা ফুলে যাওয়া গরুগুলো শুতে পারছে না। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তত্ত্বাবধানে আক্রান্ত গরুগুলোর চিকিৎসা চলছে বলে জানান তারা।
উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের আবদুস সাত্তার জানান, আমার একটি গাভীর গায়ে চামড়ার নিচে ৩-৪ দিন আগে গুটি দেখা দেয়। স্বাভাবিক মনে করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করিনি। এখন দেখছি গরুর গায়ের অনেকস্থানে একই ধরণের গুটি দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ডাক্তার স্মরনাপন্ন হওয়া পর এ রোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি।
উপজেলার প্রসাদপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামের আজিজার রহমান বলেন, আমার একটি বাছুরের পা ফুলে যায় ও দুর্বল হয়ে পড়ে। বাছুরটি আর উঠে দাঁড়াতে পারছিল না। এ অবস্থায় একটি ভ্যানে করে প্রাণিসম্পদ দপ্তরে নিয়ে সেটির চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। উপজেলার সূর্য নারায়নপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের খামারের দুটি এ রোগে আক্রান্ত হবার খবর পাওয়া গেছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সুত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে এ রোগ সম্পর্কে জনগনকে সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ ও গুরুত্বপূর্ণস্থানে পোষ্টার লাগানো হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পাশাপাশি ১৮ জন স্বেচ্ছাসেবক সার্বক্ষণিক মাঠে থেকে আক্রান্ত পশুগুলোকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তবে লোকবল সংকটের কারণে হিমসিম খেতে হচ্ছে বলেও সুত্রটি উল্লেখ করেন।
মান্দা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন শায়লা শারমিন বলেন, এ রোগটি মুলত: আফ্রিকা দেশ থেকে আসা। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। মশা, মাছি ও আটালির মাধ্যমে এ রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে। ইনজেকশনের একই সিরিঞ্জ একাধিক গরুকে পুশ করাও রোগটি ছড়িয়ে পড়ার আরেকটি কারণ হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ভেটেরিনারি সার্জন শায়লা শারমিন আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এ রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। তবে, এটি গবেষনার পর্যায়ে রয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধি ও জীবানুনাশক দিয়ে গোয়ালঘর পরিচ্ছন্ন রাখলে এ রোগ থেকে অনেকটা নিরাপদে থাকা যাবে। এ রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ও এন্টিহিস্টামিন ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।