মোঃ মনসুর রহমান। এলাকায় মানসম্মত মাদ্রাসা শিক্ষার বিস্তারে ভালো একজন শিক্ষক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন নিয়ে ২০০০ সালে বাবনাবাজ মাদ্রাসায় সহকারি শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। বুক ভরা আশা ছিল প্রতিষ্ঠানটি একদিন সরকারি অনুদান পাবে, শিক্ষকদের বেতন-ভাতা হবে, পরিবার-পরিজন নিয়ে শিক্ষক ও কর্মচারীরা ভালো ভাবে জীবণ যাপন করতে পারবে। কিন্তু মনসুর রহমানের আশায় গুড়ে বালি। বিদ্যালয়ের সাফল্যে মাদ্রাসার শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী খুশি হলেও কোন অদৃশ্য কারণে বাবনাবাজ মাদ্রাসাটি সরকারি অনুদান থেকে বঞ্চিত হয়েছে বার বার। আশায় আশায় বুক বেঁধে থেকে মাদ্রাসায় কর্মরত ১৮জন শিক্ষক-কর্মচারীর আশার বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। জীবণ ও জীবিকার তাগিদে পরিবারের সদস্যদের মুখে দুমুঠো আহারের সংস্থান করার জন্য শিক্ষকতার পাশাপাশি মনসুর রহমানসহ আরো কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেছে নিতে হয়েছে কৃষি মজুরের পথ। তবুও তাঁরা শিক্ষকতা পেশাকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন। কিন্তু গত ২৩ তারিখে সরকার কর্ত্তৃত প্রকাশিত এমপিও ভুক্তির তালিকায় মাদ্রাসার নাম না থাকায় তাদের চরমভাবে মর্মাহত করেছে। ২৭বছর ধরে বাবনাবাজ দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক ও কর্মচারীরা মনের গহীনে যে স্বপ্ন বুনন করছিলেন তা ভেঙ্গে খাঁন খাঁন হয়ে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে তাঁরা আগামীর পথ পাড়ি দিবেন তা নিয়ে তাঁরা চরম শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এলাকায় মাদ্রাসা শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ১৯৯২সালে পত্নীতলা উপজেলা সদর নজিপুর হতে ২কিলোমিটার দুরে বাবনাবাজ নামক স্থানে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ৮১ শতক জমির উপর মাটি ও ইটের ঘরে মাদ্রাসাটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠার পর ২০০০ সাল পর্যন্ত এফতেদায়ী শাখা এবং ২০০১ সাল থেকে দাখিল শাখার যাত্রা শুরু হয়। ২০০৪ সালে মাদ্রাসাটি অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে। একাডেমীক স্বীকৃতি লাভের পর থেকেই প্রতিষ্ঠান কর্ত্তৃপক্ষ এমপিও ভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কিন্তু বার বার তাঁরা এমপিওভুক্তি হতে বঞ্চিত হয়েছে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকালীন সুপার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, মাদ্রাসাটি নানা প্রতিকুলতাকে উপেক্ষা করে টানা ৭বছর ধরে জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষায় শতভাগ পাশ সহ উল্লেখযোগ্য ছাত্র-ছাত্রী জি.পি,এ-৫ পেয়ে সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছে। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা, পরীক্ষায় পাশের হার, জমি, অবকাঠামো সকল ক্ষেত্রেই মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্তির সকল শর্ত পুরণ করেছে। কিন্তু কি কারণে তাঁর প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি হতে বাদ পড়ছে তা নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেন। মাদ্রাসায় কর্মরত মোট ১৫জন শিক্ষক ও ৩ জন কর্মচারীর পরিবার-পরিজনকে রক্ষার জন্য মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্তি করণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য তিনি শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এ বিষয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, বার বার চেষ্টার পরও আমি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করাতে পারিনি। এবারের চেষ্টাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো। আমার প্রতিষ্ঠান থেকেও সারাদেশে অনেক দূর্বল প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোচাহাক আলীর মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।