লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ৯ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে প্রথমে অপহরণ করে কথিত মাওলানা দিয়ে বিয়ে, পরে একটি ঘরে ৫দিন আটকে রেখে কয়েক বন্ধু মিলে গনধর্ষনের অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় সন্ত্রাসী আজিজুল ইসলাম বিরুদ্ধে। থানায় মামলা দায়ের করায় নিরাপত্তাহীনতায় বাড়ি থেকে বের হতে পারছেনা ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রীসহ তার পরিবার। লজ্জা, অপমান, ভয়, আতঙ্ক এবং শারিরীক যন্ত্রনা নিয়ে নিজ বাড়িতে অনাগত ভবিষ্যতের দুঃচিন্তা নিয়ে প্রহর গুনছেন হতভাগা স্কুল ছাত্রী ও তার পরিবার।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে সদর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজ আলম আগামি রোববার ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রীর মেডিকেল পরিক্ষা সম্পন্ন করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন।
ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রী তিস্তা গার্লস্ উচ্চবিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী এবং গোকুন্ডা ইউনিয়নের তহিদুল ইসলামের মেয়ে।
এর আগে বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাতে ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রীর বাবা তহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে আজিজুল ইসলামকে প্রধান করে ৫জনের বিরুদ্ধে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তবে এখন পর্যন্ত থানা পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি।
গত রোববার (২১ অক্টোবর) চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নে।
মামলার আসামিরা হলেন, গোকুন্ডা ইউনিয়নের মোল্লাটারী এলাকার মৃত আবদুল খালেতের ছেলে আজিজুল ইসলাম (২২), কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের সুলতান বাহাদুল এলাকার মোঃ আলমের ছেলে আতিকুর রহমান (২৩), গোকুন্ডা ইউনিয়নের কবিরাজটারী এলাকার জাহেদুলের ছেলে আরিফুল (২৪), একই ইউনিয়নের মোল্লাটারী এলাকার ছামাদ মিয়ার ছেলে রানা (২০) ও নেছার উদ্দিনের ছেলে জেখারুল ইসলাম (২১)। এছাড়াও আরো ২/৩জনের অজ্ঞাত নাম দেয়া আছে।
অর্ষিতা স্কুল ছাত্রী তহমিনা জানান, তার এলাকার কলেজ ছাত্র আপেলের কাছে প্রাইভেট পড়তো সে। তার মাধ্যমেই মুন্সিটারীর বখাটে যুবক আজিজুলের সাথে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে আজিজুলের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত ১৫ অক্টোবর বিয়ে করবে বলে তাকে ঢাকায় নিয়ে যায়। সেখানে মৌলভি দ্বারা বিয়েও করে সে। পরে তাকে আবার তিস্তায় নিয়ে তার বাড়িতে না উঠায়ে ওই ইউনিয়নের বড় মসজিদের পাশে বাংলালিংক টাওয়ারের একটি ঘরে নিয়ে যায়। কথিত হুজুর দিয়ে সাজানো বিয়ের মাধ্যমে টাওয়ারের ভিতর টিনের ঘুপরি ঘরে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে অচেতন করে আজিজুলের বন্ধুরা তাকে ধর্ষণ করে। এভাবেই টানা ৫ দিন সেখানে অচেতন অবস্থায় তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। যদিও তাদের কাউকে সে ঠিক মতো চিনতে পারেনি। তারপরেও তাদের দেখলেই চিনতে পারবে বলে জানায় সে।
২১ অক্টোবর রাতে ওই স্কুল ছাত্রীকে ঢাকায় পাচারের উদ্দেশ্যে তিস্তা বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে আসলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাবা মায়ের কাছে ফিরে এলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের হুমকিতে পরিবারের কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না।
এমতাবস্থায় স্থানীয় মানুষদের কানাঘুষায় সাংবাদিকদের নজরে এলে ধর্ষিতা স্কুলছাত্রী ও তার পরিবার মিডিয়ার মুখোমুখি হয়। পরে মিডিয়ার সাহসে পেয়ে ফাস করে দেয় বখাটেদের সকল অপকর্ম। এরপর পরই ধর্ষকরা সবাই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
গত বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাতে মামলা রেকর্ড হলেও এখন পর্যন্ত পলাতক কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি থানা পুলিশ। তবে রোববার ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রীকে সদর হাসপাতালে নিয়ে এসে তার মেডিকেল পরিক্ষা করা হবে বলে সদর থানা পুলিশ জানিয়েছে।
মামলার মুল আসামি আজিজুলের মা জানান, তার ছেলে একেবারেই নির্দোষ। তার বন্ধু আপেল, মিঠু, আরিফের খপ্পরে পরে তার ছেলের আজ এই পরিনতি। সে এরকম কোনদিনই ছিলো না। কয়েকদিন থেকেই তার সাথে পরিবারের কোনও যোগাযোগ নেই।
ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রীর বাবা তহিদুল ইসলাম জানান, তারা জানতেন এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী আজিজুলের সাথে তাদের মেয়ে পালিয়ে গেছেন। এর পরে থানায় অভিযোগ দেয়ার জন্য যেতে চাইলে তার সঙ্গীরা বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখান। তাই থানায় যেতে পারেননি। পরে সাংবাদিকের সহযোগিতায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি তার মেয়ের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য দোষীদের শাস্তি দাবী করেন।
এলাকাবাসী জানান, মাত্র কয়েকদিন আগেই ভোলার মনপুরায় গনধর্ষনের রেশ কাটতে না কাটতেই লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ৯ম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীকে পালাক্রমে গনধর্ষনের ঘটনায় অপরাধীদের বিচারের দাবীতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে এলাকাবাসী। আসামীদের গ্রেফতার করা না গেলে যে কোন সময় পরিস্থিতি ভিন্নরূপ ধারন করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তারা। এজন্য অবিলম্বে দোষী ব্যাক্তিদের গ্রেফতার পুর্বক শাস্তি প্রদানের দাবী করেন। সেই সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার বিচার প্রার্থনা করেন।
লালমনিরহাট সদর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজ আলম জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর পরই মামলা রেকর্ড করে আসামীদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।