বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে বিগত ৫ বছরের মধ্যে নিবন্ধিত বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য জরুরি ভিত্তিতে চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিলাসবহুল ওসব গাড়ির তথ্য চেয়ে এর আগে আরো দুবার বিআরটিএকে চিঠি দিয়েছিল দুদক। প্রথম চিঠিটি দেয়া হয় গত বছরের ২৮ জুন। এরপর গত ২৫ সেপ্টেম্বর দেয়া হয় দ্বিতীয় চিঠি। কিন্তু বিআরটিএ সম্পূর্ণ তথ্য না দেয়ায় দুদক তৃতীয়বারের মতো তথ্য চেয়ে চিঠি দেয় দিয়েছে। দুদক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জালজালিয়াতির মাধ্যমে কার্নেট ডি-প্যাসেজ সুবিধায় আনীত বেশকিছু বিলাসবহুল গাড়ি ভুয়া রেকর্ডপত্রের ভিত্তিতে বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন নেয়া হয়েছে এমন একাধিক অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। আর ওসব অভিযোগ অনুসন্ধানের প্রয়োজনেই বিআরটিএর কাছ থেকে বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য চাওয়া হয়েছে। আর বারবার চিঠি দেয়ার পরও পূর্ণাঙ্গ তথ্য না দেয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে নতুন চিঠিতে দুদক বলেছে, ২৫০০ বা এর বেশি সিসির ব্যক্তিমালিকানাধীন গাড়ি বা জিপ গাড়ির ব্র্যান্ডের নামসহ অন্যান্য তথ্য সংযোজন করে নতুন করে তালিকা পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে দুদকে পাঠাতে হবে। ওসব গাড়ি নতুন না রিকন্ডিশনড, সে তথ্যও তালিকায় সন্নিবেশিত করতে হবে।
সূত্র জানায়, কার্নেট ডি-প্যাসেজ এমন একটি দলিল, যা কোনো নাগরিককে গাড়িসহ তার নিজ দেশ থেকে আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রমের অনুমতি দেয় এবং এতে শুল্ক এড়ানো যায়। মূলত এটি একটি প্রতিশ্রুতি যে একজন নিজ দেশের বাইরে যাওয়ার সময় গাড়িটি সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন, আবার ফেরার সময় গাড়িসহ ফিরবেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কার্নেট ডি-প্যাসেজ সুবিধায় বাংলাদেশে আনা গাড়ি ফেরত যায় না। অবৈধভাবে ওসব গাড়ি বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছে বিক্রি করে চলে যান সংশ্লিষ্ট বিদেশী নাগরিক। পরবর্তী সময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে বিআরটিএর কাছ থেকে ওসব গাড়ির নিবন্ধন নেয়া হয়। দেশে কার্নেট ডি-প্যাসেজ ছাড়াও কূটনৈতিক সুবিধায় আনা শুল্কমুক্ত গাড়ি বিক্রির সময় শুল্ক পরিশোধ না করে অবৈধভাবে নিবন্ধন নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। শুল্ক পরিশোধের জাল কাগজপত্র দিয়েই মিলেছে নিবন্ধন। অথচ ওসব বিলাসবহুল গাড়ি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ শুল্ক পরিশোধের বিধান থাকলেও বিআরটিএর দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় তা ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। এ অভিযোগে বিভিন্ন সময় একাধিক মামলাও করেছে দুদক।
সূত্র আরো জানায়, ইতিপূর্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও (এনবিআর) বিলাসবহুল গাড়ির মালিকদের আয়করের তথ্য খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছিল। সেজন্য বিআরটিএর কাছ থেকে গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের সময় মালিকের দেয়া করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন), গাড়ির নাম, মডেল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর সংগ্রহ করা হয়েছিল।
এদিকে বিআরটিএ’র কাছে নতুন করে বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য জরুরি ভিত্তিতে চেয়ে পাঠানো চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের উপপরিচালক ও মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য। দুদকের বিশেষ তদন্ত অনু বিভাগের মহাপরিচালক সাইদ মাহবুবের সই করা চিঠিটি বিআরটিএ চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে গত পাঁচ বছরে বিআরটিএতে নিবন্ধন করা ২৫০০ সিসি বা তার বেশি অশ্বশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন গাড়ি বা জিপ গাড়ির তালিকা চাওয়া হয়।