টঙ্গীতে মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় এক যুবককে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে তিস্তারগেইট এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। ভুক্তভোগী আবেদ আলি (২১) মরকুন পশ্চিমপাড়া এলাকার জুলহাস মিয়া লিটনের ছেলে। আবেদ আলির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা যায়, মরকুন পশ্চিম পাড়ার জুলহাস মিয়া লিটনের ছেলে আবেদ আলি এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ-গান করে বেড়ায়। পাশাপাশি সে কোনাবাড়ির একটি পোশাক কারখানায় কাজ করে। গত তিনমাস আগে মুঠোফোনে আবেদের সঙ্গে পরিচয় হয় তিস্তারগেইট ইউনাইটেড স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সামিরার। ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে তাদের মধ্যে। মুঠোফোনে প্রেমের সুবাদে গত শনিবার রাতে আবেদকে বাড়িতে ডেকে নেয় সামিরা। রাতে হঠাৎ সামিরার ঘর থেকে আওয়াজ আসলে পরিবারের লোকজন সামিরার খাটের নিচ থেকে আবেদকে আটক করে মারধর শুরু করেন। খবর পেয়ে সামিরার মামা আলি আজগর ও তার লোকজন সামিরাদের বাসায় আসে। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ভাগ্নির সমস্যা হবে ভেবে আবেদকে আলি আজগর তিস্তার গেইট এলাকার গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির ৫ম তলায় আজগরের ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। সেখানে সাউন্ডবক্সে উচ্চশব্দে গান বাজিয়ে রাত ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত আবেদকে হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। প্লাস দিয়ে হাত-পায়ের নখ উঠানোর চেষ্টাও করা হয় আবেদের। সাউন্ডবক্সের উচ্চশব্দে চাপা পড়ে আবেদের আর্তনাদ, চিৎকার। নির্যাতন করার সময় আবেদের চিৎকারের শব্দ যেন বাইরে না যায় সে উদ্দেশ্যেই উচ্চশব্দে গান বাজানো হয়। একপর্যায়ে আবেদকে চুরির অপবাদ দিয়ে তার চুল কেটে দেয় আলি আজগর ও তার লোকজন। খবর পেয়ে আবেদের বাবা জুলহাস মিয়া লিটন, দাদা মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ মিয়া ও বোন আজগরের বাসা থেকে আবেদকে উদ্ধার করে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরদিন রোববার সকালে ভিকটিম আবেদের দাদা মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ মিয়া টঙ্গী পূর্ব থানায় মামলা করতে গেলে মামলা না নিয়ে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল ইসলাম মামলা করতে নিষেধ করেন বলে অভিযোগ করেন ওই মুক্তিযোদ্ধা।
তবে মামলা না নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল ইসলাম বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। প্রেমঘটিত একটি বিষয় নিয়ে মারধরের ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। বিষয়টি এসআই সেলিম তদন্ত করতেছে। ২৪ ঘন্টা থানার দরজা সবার জন্য খোলা, যে কেউ অভিযোগ করতে পারবেন।
অন্যদিকে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেলে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে স্থানীয় মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী নাসরিন পুলিশ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে দেনদরবার শুরু করেন। সংবাদকর্মীরা তথ্য নিতে গেলে নাসরিন বলেন, “আমি কি কই হেইডা লেখেন। লেখেন রাত্রে ১টায় চুরির উদ্দেশ্যে ঘরে ঢুকেছিলো, ঘরে ঢুকার পর পরিবারের লোকজন ধইরা মারধর করছে। চোররে মারবো না তো কি আদর করবো? আর যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে তাইলে আমাগো মেয়েরে (সামিরা) দিয়া থানায় ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা কইরা দিমু।
ভিকটিম আবেদ আলির দাদা মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ মিয়া জানান, আমার নাতিকে মোবাইলে ডাইকা নিয়া হাতুড়ি, রড ও লাঠি দিয়া মারধর করছে। মাথার চুল কাইটা দিয়েছে। কিন্তু থানায় মামলা করতে গেলে আমাদের মামলা নেয় নাই। বাধ্য হয়ে আমরা আদালতে মামলা করছি।
অপরদিকে সামিরার মামা আলি আজগর মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, চুরি করতে আমার ভগ্নিপতির বাসায় ঢুকছিলো তাই মারধর করছি। পরে আমার বাসায় নিয়ে এসে আবেদের পরিবারকে ডেকে তাদের হাতে তুলে দিছি। তবে কে চুল কাটছে সেইটা আমি জানি না।
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, এটা জঘন্য অপরাধ। আমি বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।