রাজবাড়ী জেলা কৃষি পন্য আবাদের অন্যতম একটি স্থান। প্রতিবছরই জেলার ৫টি উপজেলায় কৃষি পন্য হিসেবে নানা ধরনের সবজি আবাদ হয়ে থাকে। এ বছরও রাজবাড়ীতে সবজির আবাদ হয়েছে প্রচুর পরিমানে। গত বছরের তুলনায় এ বছর সবজির লক্ষ মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। সবজির বাজার দর ভালো থাকায় এ বছর কৃষকেরা নানা জাতের সবজি বিক্রি করে গত কয়েক বছরের তুলনায় ভালো লাভবান হচ্ছেন। কোন কোন কৃষক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে সবজি বিক্রি করে আয় করছেন খরচের কয়েক গুন টাকা।
রাজবাড়ীর ৫টি উপজেলাতেই প্রচুর পরিমানে সবজি আবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে সদর, বালিয়াকান্দি ও গোয়ালন্দ উপজেলাতে এর আবাদ বেশি হয়। শীতকালীন আবাদি সবজির মধ্যে পটল, বেগুন, ফুল কফি, বাঁধা কফি, লাউ, শিম, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপেঁ, মুলা, টমেটো সহ সব ধরনের সবজি আবাদ হয়ে থাকে। এ বছর সবজির বাজার দর ভালো থাকায় কৃষকেরা ভালো লাভবান হচ্ছেন। কেউ কেউ পটল ও কফি চাষ করেই খরচের চাইতে লাভবান হচ্ছেন কয়েক গুন। ভালো লাভবান হওয়ায় দিন দিন সবজির আবাদ বাড়িয়েছেন কৃষকেরা।
বালিয়াকান্দি জামালপুরের সবজি চাষী আতিকুল শেখ একই এলাকার আরেক সবজি (কফি) চাষি- তিনি বলেন, ৭ বিঘা জমিতে তিনি শীতকালীন সবজি চাষ করেছেন। তারও সব মিলিয়ে এক লক্ষ টাকার মত খরচ হয়েছে কফি চাষ করে। তিনি এ পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকার কফি বিক্রি করেছেন। বিঘা প্রতি প্রায় ৫০ মণ কফি আবাদ হয়। প্রতি কেজি কফি শুরুতে বিক্রি করেছেন ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা করে। বর্তমানে প্রতি কেজি বিক্রি করছেন ৩০ টাকায়। ফলন ভালো হয়েছে,বাজার দরও ভালো থাকায় সবজি চাষ করে ভালো লাভবান হয়েছেন তারা। তবে সবজি আবাদ করে তাদের খরচ বাদ দিয়ে বার আনাই লাভবান হচ্ছে বলে আগামীতে এর আবাদ আরো বেশি করবেন বলে জানান।
সবজি চাষী মোঃ ফজলু মোল্লা বলেন, গত বছর তিনি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে পটল চাষ করেছেন। একবার চাষ করে তিনি পরপর দুই বছর এ গাছ থেকে ফলন পাচ্ছেন। সাড়ে তিন বিঘা জমিতে তিনি পটল চাষ করতে খরচ হয়েছে এক লক্ষ টাকার কিছু বেশি। এ পর্যন্ত তিনি ৫ লক্ষ টাকার পটল বিক্রি করেছেন। আরো তিনি ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকার পটল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তিনি সবজি চাষ করে ভালো লাভবান হয়েছেন। এই সবজি বিক্রি করে তিনি ও তার স্ত্রী রাবেয়া বেগম সংসার ও ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। সবজি চাষ করে তাদের পরিবার স্বচ্ছল ভাবে চলতে পারছেন।
তবে কোন কোন কৃষক কৃষি পন্য আবাদে সার, ওষুধ ও কীটনাশকের দাম বেশি থাকায় কৃষি পন্য উৎপাদনে তাদের ফসল উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে বলে জানান। তারা বলেন ঔষদ ও কীটনাশকের দাম কম হলে আমাদের সুবিধা হয়। কোন কারণে সবজী ক্ষতিগ্রস্থ হলে আর্থিক ঝুকি বেড়ে যায়।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক মো. ফজলুল রহমান বলেন, রাজবাড়ীতে সব ধরনের সবজি আবাদ হয়ে থাকে। কৃষকেরা আগাম সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। রাজবাড়ীতে এ বছর ৬ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে এর চাষ হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৫ হাজার ৭ শত ৭৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল। এবছর সবজি আবাদের লক্ষ মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছেন। জেলার বালিয়াকান্দি সহ বিভিন্ন স্থানে আগাম সবজি চাষ করে ভালো লাভবান হচ্ছেন। কৃষকদের বিভিন্ন কৃষি কর্মকর্তারা সবজি চাষে পরামর্শ প্রদান করছেন তাদের কৃষি পন্য আবাদে। তবে সবজি আবাদের প্রথমে বন্যায় কৃষকদের কিছুটা ক্ষতি হলেও বাজর দর ভালো থাকায় তা পুষিয়ে নিতে পারছেন।