সারাদেশেই ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন অমান্য করেই চলেছে ধূমপায়ীরা। যাদের কারণে রাজশাহীর পদ্মা পাড়সহ মহানগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোর পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ফলে নির্মল পরিবেশে আনন্দ উপভোগ করতে আসা বিনোদনপ্রেমিদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এসব স্থানে প্রতিনিয়তই আইন অমান্য করলেও সেসব ধূমপায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা এমন অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিনোদনপ্রেমিরা। একই সাথে ধূমপানের বিষাক্ত ধোঁয়া থেকে শিশুসহ সকলকে রক্ষা করতে পদ্মাপাড় ও মহানগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষনিক আইনপ্রয়োগের দাবি জানিয়েছেন বিনোদনপ্রেমিরা। নয়তো, অদূর ভবিষ্যতে যত্রতত্র ধূমপানের কারণে বিনোদন কেন্দ্রগুলো মানুষশূন্য হয়ে পড়বে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।
রাজশাহীতে বিনোদনপ্রেমিদের বিনোদনের অন্যতম স্থান পদ্মাপাড়। পুরো পদ্মাপাড়ের নৈস্বর্গিক দৃশ্য যে কাউকে আকৃষ্ট করবেই। তাই পদ্মাপাড়ের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য অবলোকনে শিশু থেকে বৃদ্ধদের উপচেপড়া ভিড় যেন লেগেই থাকে। কিন্তু নির্মল পদ্মাপাড়ের স্নিগ্ধ-কোমল বিশুদ্ধ বাতাস এখন ধূমপায়ীদের ধূমপানের ধোঁয়ায় বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। ফলে প্রতিদিনই নির্মল বিনোদন নিতে আসা শিশুসহ হাজারো বিনোদনপ্রেমিরা ক্রমেই ধূমপায়ীদের বিষাক্ত নিকোটিনের ধোঁয়ার কবলে পড়ে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে ধাবিত হচ্ছে।
গত এক সপ্তাহে রাজশাহীর পদ্মাপাড়সহ মহানগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিনোদনপ্রেমিদের পদচারণায় মুখর রয়েছে। বিশেষ করে প্রতিদিন বিকালে পুরো পদ্মাপাড়ে বিভিন্ন বয়সের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতি সবার নজর কাড়ে। সাজ সাজ রবে মনে হয়, সব সময়ই পুরো পদ্মাপাড় একটি মিলনমেলার আবাসভূমি। কিন্তু এমন নির্মল পরিবেশে থাকা হাজারো মানুষের ভিড়ের মধ্যেই ধূমপায়ীদের ধূমপানের দৃশ্য হতবাক। রীতিমত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত পোষাকেও (ইউনিফর্ম) ধূমপান করতে দেখা যাচ্ছে। যে দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে মূর্তির ন্যয় দাঁড়িয়ে পড়ছে সকলেই। ছেলেদের সাথে থাকা ইউনিফর্মরত অবস্থায় পাল্লা দিয়ে মেয়েরাও ধূমপান করছে। যে দৃশ্যে পদ্মাপাড়ে বেড়াতে আসা বিনোদনপেমিদের ভাবিয়ে তুলেছে।
স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে পদ্মাপাড়ে বেড়াতে আসা মহানগরীর টিকাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. শরীফ উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পদ্মাপাড়ে নির্মল বিনোদনের জন্য অত্যন্ত সুন্দর একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। এখানে শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমাগম বিরাজমান। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই পাবলিক প্লেসে কর্মজীবিদের সাথে পাল্লা দিয়ে স্কুল ড্রেসে থাকা কিশোর কিশোরীরাও দেদারছে ধূমপান করছে। অথচ, এর আগে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান, রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষসহ স্থানীয় প্রসাশনের শীর্ষ কর্মকর্তাগণ বলেছিলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত পোষাকে (ইউনিফর্ম) নদীর ধারসহ অন্য কোন স্থানে শিক্ষার্থীদের আড্ডারত অবস্থায় পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে ঘোষণার পর এক সপ্তাহের মত সে তদারকি লক্ষ্যনীয় থাকলেও এখন নাই। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদেরও কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছেনা।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মাপাড়ে বিভিন্ন বসার স্থান ও ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে নানা বয়সের মানুষ আড্ডা দিচ্ছিলো। পাশেই বসে স্কুল-কলেজ পড়-য়া শিক্ষার্থী, স্থানীয় টোকাইসহ নানা বয়সী ধূমপায়ীরা ধূমপান করছে। এমনই কয়েকজন কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীকে সোমবার বিকালে বড়কুঠি পদ্মারপাড়ের জনসমাগম স্থলে ধূমপান করতে দেখা গেল। পাবলিক প্লেসে কেন ধূমপান করছেন এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে চঞ্চল নামে তাদের একজন বলে উঠলেন, ‘কিসের পাবলিক প্লেস। খোলামেলা জায়গায় বসে সিগারেট খাচ্ছি এতে আবার ক্ষতির কী হলো!’ তাদের মত অনেকেই দেদারছে ধূমপান করছে কিন্তু কেউ তাদেরকে ধূমপান করতে নিষেধ করার সাহস পাচ্ছে না।
আম-মামুন নামে সেখানে বেড়াতে আসা এক বিনোদনপ্রেমি বলেন, ‘পদ্মাপাড়ে ধূমপায়ীদের অধিকাংশই স্থানীয় কিশোর গ্যাং কিংবা লোকাল লোকজন। তাদেরকে ধূমপান নিষেধ করার কথা বললেই তারা উল্টো কথা শুনিয়ে দেয়। এমনকি আক্রমণাত্মক আচরণও করে। তাই মানসম্মানের ভয়ে কেউ তাদেরকে ধূমপান থেকে বিরত থাকার কথা বলতে সাহস পায় না।’
তবে সচেতন রাজশাহীবাসীর দাবি, পদ্মাপাড় নির্মল বিনোদনের অন্যতম একটি কেন্দ্র। ধূমপানের কারণে নির্মল বিনোদন নিতে আসা মানুষগুলোকে যাতে বিশুদ্ধ বাতাসের পরিবর্তে ধূমপানের ধোঁয়া নিয়ে ফিরে যেতে না হয় এজন্য তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘পদ্মাপাড়ে নারী-শিশু থেকে শুরু করে নানান বয়সী মানুষের সমাগম সব সময় বিরাজমান। অথচ এমন গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক প্লেসে ধূমপান জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর কারণে অনেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থাগ্রহণ জরুরি।’
রাজশাহীর আইনজীবী লোকমান আলী বলেন, ‘২০০৫ সালে (সংশোধন ২০১৩) ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) নামে একটি আইন পাস হয়েছে। আইনের ৪ এর (১) উপ-ধারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি পাবলিক প্লেসে ধূমপান করতে পারবে না কেউ করলে তিনশত টাকা অর্থদন্ড করার বিধান রয়েছে। কিন্তু তদারকি না থাকায় আইনটির যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছেনা।’
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. হামিদুল হক বলেন, রাজশাহীতে উঠতি বয়সের ছেলেদের যেখানে-সেখানে বসে আড্ডা দেয়া কিংবা ধূমপান করার বিষয়টি আমরা মনিটরিংয়ের মধ্যে রেখেছি। আমাদের ক্রাস প্রোগ্রাম অব্যাহত ছিল। এটি আরও বেড়ে গেলে প্রোগ্রামটি আরও জোরদার করা হবে। এ ছাড়া পদ্মারপাড় নগরীর বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে ধূমপান বন্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও দাবি করেন ডিসি।