কাগজের মূল্য প্রতি টনে প্রায় ২০ হাজার টাকা কমেছে। তারপরও এক শ্রেণীর অসাধু মুদ্রাকর নিম্নমানের ব্যবহার অযোগ্য কাগজে বই ছাপার চেষ্টা চালাচ্ছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ( এনসিটিবি ) ও মান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের হাতে ইতোমধ্যে ওই ধরনের অপকর্মে জড়িত অন্তত ১৮ প্রতিষ্ঠান ধরা পড়েছে। বাতিল করা হয়েছে ওসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৮শ মেট্রিক টন কাগজ। পাশাপাশি নিম্নমানের ছাপা, মলাট ও ভুলে ভরা ছবিসহ নানা কারণে কেটে ফেলা হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এক লাখ কপি পড়ার অযোগ্য বই। এমন পরিস্থিতিতে এনসিটিবি বেকায়দায় পড়েছে এনসিটিবি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ৪ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ৩৫ কোটি ৩১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৫৪ কপি বই ছাপছে। তার মধ্যে প্রাথমিক স্তরে ১০ কোটি ৫৪ লাখ দুই হাজার ৩৭৫ কপি ও মাধ্যমিক স্তরে ২৪ কোটি ৭৭ লাখ ৪২ হাজার ১৭৯ কপি বিনামূল্যের বই বিতরণ করা হবে। ইতোমধ্যেই বেশিরভাগ বই মাঠপর্যায়ে চলে গেছে। আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে পাঠ্যবই ছাপার পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু বই ছাপা ও বিতরণের শেষ পর্যায়ে এসে সরকারকে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে পড়তে হচ্ছে। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সক্রিয় হলেও এনসিটিবিকে বই বিতরণ কাজের মধ্যে অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা সামাল দিতেই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। আর মান মূল্যায়নের কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠান ব্যুরো ভার্টিটাস বাংলাদেশ ( প্রাইভেট ) লিমিটেড ও কন্টিনেন্টাল ইনস্পেকশন বিডি লিমিটেডকে সামাল দিতে হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীদের মূল কর্মকাণ্ড। মান মূল্যায়নের কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দাবি, এক ম্রণেীর ব্যবসায়ী নিম্নমানের কাগজে বই ছাপতে চায়। আর নিম্নমানের কাগজ ও বই ধরলেই হয়রানি করা হচ্ছে বলে নানা অভিযোগ তুলে। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে মান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা হয়। তবে মানের ক্ষেত্রে কোন ছাড় হবে না।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক দরপত্রে বিদেশী প্রতিষ্ঠান ঠেকাতে এবার প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কমমূল্যে প্রাথমিক স্তরের সব বই ছাপার কাজ নিয়েছে কিছু দেশীয় মুদ্রাকর ( প্রিন্টার্স )। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানই কমদামে কেনা নিম্নমানের কাগজে বই ছেপে লাভ পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত। এমন পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ের মান যাচাইয়ে সরকার নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান মেসার্স ব্যুরো ভেরিটাস এনসিটিবি সচিবের কাছে এক চিঠিতে বলেছে, টাঙ্গাইল অফসেট প্রেস ব্যুরো ভেরিটাসের পরিদর্শন ছাড়াই নিজেদের কেনা কাগজে বই ছাপাচ্ছে। তাদের বারবার সতর্ক করার পরও তারা অননুমোদিত কাগজেই বই ছাপছে। তাদের ছাপাখানায় অনুমোদনহীন প্রচুর কাগজের রিল রয়েছে। ওই রকম আরো কয়েকটি প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের মালিক নিজেদের ইচ্ছামতো কাগজ কিনে বই ছাপার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ অন্যের ( ভাড়া করা ) ছাপাখানায় বই ছাপতে এনসিটিবির অনুমোদন পেতে কর্মকর্তাদের কাছে তদবির চালাচ্ছে, চাপ প্রয়োগ করছেন। তবে বইয়ের মান রক্ষায় অনড় এনসিটিবি। ইতোমধ্যে নিম্নমানের কাগজে মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপার উদ্যোগ নেয়ায় ১৮ ছাপাখানার এক হাজার ৭৬১ টন কাগজ বাতিল করে শর্ত অনুযায়ী পুনরায় কাগজ কিনে বই ছাপতে বাধ্য করা হয়েছে। আর প্রাথমিক স্তরেও নিম্নমানের কাগজ সরবরাহ করায় কয়েকটি কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১১শ টন কাগজ ছাপার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। তাছাড়া এনসিটিবির শর্তের তোয়াক্কা না করে বই ছাপায় ৭টি ছাপাখানার প্রায় এক লাখ কপি বই কেটে দিয়েছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।
সূত্র আরো জানায়, ২০ শিক্ষাবর্ষে নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যবই ছাপতে অসাধু মুদ্রাকরদের বেপরোয়া তৎপরতা ও কাগজের মান মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাচারিতায় বেকায়দায় পড়েছে এনসিটিবি। এবার কাগজের মূল্য প্রতি টনে প্রায় ২০ হাজার টাকা কমলেও এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী নিম্নমানের কাগজে বই ছাপার চেষ্টা থেকে পিছু হটছে না। আবার সরকার নিযুক্ত প্রতিষ্ঠানও কাগজের মান পরীক্ষায় অযথা সময়ক্ষেপণ করছে।
এদিকে এনসিটিবির চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্বে থাকা সদস্য ( টেক্সট ) প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম জানান, নিম্নমানের কাগজে বই ছাপা, নিম্নমানের কালি ও গ্লু ব্যবহারসহ নানান অনিয়মের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাগজ বাতিল ( ছাপার অযোগ্য ) করা হয়েছে। তাদের পুনরায় দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী কাগজ কিনতে বাধ্য করা হয়েছে। কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো- এবার কাগজের দাম টনপ্রতি প্রায় ২০ হাজার টাকা কমেছে। এরপরও কেউ কেউ নিম্নমানের কাগজে বই ছাপার চেষ্টা করছে। এনসিটিবির বক্তব্য হচ্ছে মানসম্পন্ন বই নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোন ছাড় হবে নাÑ এটাই শেষ কথা।