চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট-বারিকবিল্ডিং সড়ককে পুলিশ হঠাৎ ভিআইপি রোড আখ্যায়িত করে রিক্সা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বুধবার থেকে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথা জানিয়েছেন ট্রাফিক বিভাগ। এতে রিক্সা মালিক-চালকদের মাঝে এই ঘটনায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ১০ বছর আগে একই রকম সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তবে তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এবারেও সেটি সম্ভব হবে কিনা; তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যে জনপ্রতিনিধি, মালিক সমিতি ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে এ-সংক্রান্ত একাধিক বৈঠক করার কথা জানালেও বাস্তবে জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি জানেন না বলে জানাগেছে। রিক্সা বন্ধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে কোন সময় মালিক ও চালক-পুলিশদের মাঝে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। ওদিকে বৃহস্পতিবার বিকালেও ওই সড়কে রিক্সা চলাচল করতে দেখা গেছে।
রিক্সা বন্ধের বিষয়টি জানেন না অনেক চালক। ফলে এই সড়কে যাত্রীরাও হয়রানি হচ্ছেন। ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) মো. শওকত সাংবাদিকদের জানান, চট্টগ্রাম শহরকে যানজটমুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রিক্সা চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে দেওয়ান হাট থেকে বারেকবিল্ডিং পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সড়ককে ভিআইপি রোড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গতকাল থেকে এই সড়কে রিক্সা চলাচল বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া এবারের উদ্যোগে হলুদ রঙের ইউনিফর্ম পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে রিক্সা চালকদের জন্য। ইউনিফর্মের জন্য ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অবৈধ রিক্সা শনাক্তে রেজিস্ট্রেশন প্লেটের সাথে বারকোড বসাতেও সিটি কর্পোরেশনে চিঠি পাঠিয়েছেন ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা। অপরদিকে উপর্যুক্ত সীদ্ধান্তের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম সিটি রিক্সা শ্রমিকলীগ (রেজি:২১০৩) ও চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন চালক-মালিক সমন্বয় পরিষদের যৌথ উদ্যোগে শহরের খুলশী থানার আমবাগান এলাকায় এক জরুরী সভার আয়োজন করা হয়। এ সময় সংগঠনের সভাপতি মো. সেলিমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন শ্রমিকলীগ নেতা মহিউদ্দিন গাফফার, রফিক কোম্পানী, বাবলু কোম্পানী, প্রদীপ কোম্পানী, ইউছুপ কোম্পানী, আলাউদ্দিন কোম্পানী, মিন্টু কোম্পানী, ছালাউদ্দিন কোম্পানী, দিদার কোম্পানী, ওয়াহাব কোম্পানী, মালেক কোম্পানী, নবী হোসেন কোম্পানী, মহিউদ্দিন কোম্পানী, আবদুর রহিম কোম্পানী, আলী আজগর, নুরুল আলম, মো. সবুজ, মো. হান্নান ও মো. কাদের প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। এই সভায় চট্টগ্রাম সিটি রিক্সা শ্রমিকলীগের সভাপতি মো. সেলিম রিক্সা বন্ধের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এমন সীদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে আমরা মালিক-চালকরা পথের ভিখারী হয়ে যাবো। বার বার ব্যাটারী চালিত রিক্সা বন্ধের আবেদন জানালেও হালিশহর থানার ওসির কারণে সেই রিক্সা বন্ধ হচ্ছেনা। পুলিশ অবৈধ রিক্সাকে মাসিক ৫লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে সড়কে চলতে সহায়তা করছেন। আর প্যান্ডেল চালিত বৈধ রিক্সার মালিক-চালকদের ওই অবৈধ রিক্সার কারণে ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এমতাবস্থায়; বিএনপি-জায়ায়াতের অনুসারী কাদের মজুমদার এবং ছিদ্দিকের ইন্ধনে পুলিশ দেওয়ান হাট থেকে বারেকবিল্ডিং পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সড়ককে ভিআইপি রোড হিসেবে আখ্যায়িত করে আমাদের বৈধ রিক্সা বন্ধের ষড়যন্ত্র করছেন।
তারা কথিত দুই শ্রমিক নেতা চৌমুহনীর দুবাই হোটেলে বসে সরকারের বিরুদ্ধে বহু ষড়যন্ত্র করছেন। কারণ; রিক্সার মালিক-শ্রমিকরা যখন ওই সীদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মাঠে নামবেন তখন পুলিশ-শ্রমিক মুখোমুখি হবেন। নানা ধরণের সংঘর্ষ হবে। এতে সরকারের বিরুদ্ধে একটি পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করবেন। পুলিশকে ভুল বুঝিতে এসব করা হচ্ছে। আমরা কোন মতেই ওই সীদ্ধান্ত মানিনা। আগে শহরের অলিগলিতে ব্যাটারী চালিত অবৈধ রিক্সা বন্ধ করুন; তারপর আপনারা ভিআইপি রোডে বৈধ রিক্সা বন্ধ করার উদ্যোগ নিলে সফল হবেন। পুলিশকে লক্ষ্য করে সেলিম বলেন, একটি ধনী পরিবারের সদস্যরা ৫-৬টি গাড়ী নিয়েই প্রতিদিন রাস্তায় বের হচ্ছেন। এদের কারণে যানজট লেগেই আছেন। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাও নেই। আর আমাদের গরীবদের যানবাহন রিক্সার দিকে আপনারা বার বার নজর দিচ্ছেন। এটা দুঃখজনক। এছাড়াও চট্টগ্রাম সিটি মেয়র কর্তৃক আমাদেরকে ২০২০সাল পর্যন্ত রিক্সার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্তায়; রিক্সায় বার কোড দেয়া অযৌক্তিক। এমন ধরণের হঠকারি সীদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে। কাদের মজুমদার এবং ছিদ্দীক এরা চোরাই রিক্সা উদ্ধারের নামে কমিশন খায়। সদরঘাট ও পাহাড়তলীতে এদের চোরাই রিক্সার আস্তানা রয়েছে। চালকদের ইউনিফর্মের জন্য আরো সময় দিতে হবে। যারা রিক্সা চালায়; তারা খেটে খাওয়া মানুষ। এরা ইউনিফর্ম তৈরী করতে টাকা লাগবে। তারা ঠিকমত রিক্সা চালিয়ে ভাত খেতে পারছেন না তারা কিভাবে ইউনিফর্মের খরচ যোগাবেন? আমি এই বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও সিটি মেয়রসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।