রংপুরের পায়রাবন্দে ঘাঘট নদীর তীরে অনুষ্ঠিত ইজতেমায় এসেছিলেন আতিয়ার রহমান। শামিয়ানার নিচে বয়ান শুনতে শুনতে হঠাৎ অসুস্থবোধ করেন। কাউকে কিছু না জানিয়ে সে ঘুমিয়ে পড়েন।কিন্তু রাত ১২টার পর আতিয়ারের রক্তচাপ বেড়ে যায়। ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এ অবস্থায় কয়েকজন যুবক তড়িঘড়ি করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্য ছুটোছুটি শুরু করে। মাঠে ফায়ার সার্ভিস ও বেসরকারি হাসপাতালের জরুরী সেবার জন্য দুটি এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও ওই সময় দেখা মেলেনি কাউকে। মুমূর্ষ অবস্থায় ছটফট করতে শুরু করে আতিয়ার। যেন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
এসময় ছুটে আসেন নাজরান রউফ নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা। সে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) সহকারী পুলিশ কমিশনার। আছেন আরএমপির ট্রাফিক দক্ষিণ জোনের দায়িত্বে। এই পুলিশ কর্মকর্তা কোন উপায় না পেয়ে নিজেই তার গাড়িতে অসুস্থ আতিয়ারকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার জরুরী ভিত্তিতে হৃদরোগ বিভাগে ভর্তি করান।
ওই রাতের কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে ছোটাছুটি করেন। ব্যবস্থা করেন ওষধসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুর। ওই রাতেই আতিয়ারের অসুস্থতার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন তার পরিবারও। সকালে আতিয়ার রহমান কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নেয়া হয়।
এদিকে আতিয়ারের অসুস্থতা এবং ওই পুলিশ কর্মকর্তার সহায়তার ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে। ইজতেমা মাঠে দায়িত্ব পালনের সময় অসুস্থ আতিয়ার রহমানের পাশে ছুটে এসে তিনি সবার প্রসংশা কুড়িয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর মহানগরীর বড়বাড়ি বানিয়াপাড়া এলাকার মৃত আবদুল হামিদের ছেলে আতিয়ার রহমান। পেশায় সে একজন মুদি দোকানী। আতিয়ারের সংসারে তিন মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে।
এদিকে মহানুভবতার পরিচয় দেয়া আরপিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার নাজরান রউফ বলেন, শুক্রবার বিকেল তিনটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ইজতেমা মাঠে আমার ডিউটি ছিল। কিন্তু আমি বারোটার পরও সেখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করি। এ সময় হঠাৎ একজন মূমুর্ষ রোগীকে নিয়ে কয়েককে ছোটাছুটি করতে দেখে আমি তাদের কাছে যায়। সেখানে কোন গাড়ির ব্যবস্থার করতে না পেরে আমি নিজেই ওই অসুস্থ রোগীকে আমার গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত হাসপাতালে ওই রোগীর পাশে ছিলাম। চেষ্টা করেছি তার বিপদে একজন মানুষ হিসেবে সহযোগিতা করার।
তিনি আরও বলেন, আমি তো জানতাম না, ইজতেমা মাঠের ওই ঘটনায় সাংবাদিক আমাকে ফোন করবে। কারণ আমি তো কাউকে দেখানোর জন্য কিংবা বাহাবা নেয়ার জন্য এই কাজ করিনি। তবে ভালো লাগছে অসুস্থ আতিয়ারের সুস্থতার খরব জানতে পেরে।