খুবই বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক ঘটনা! রেল ভ্রমণকে আমরা বরাবরই নিরাপদ যাতায়াত মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়ে থাকি। এখানেও যদি এভাবে বেঘোরে, অমনোযোগে বা অসচেতনতায় সিগন্যাল অমান্য করা হয়ে থাকে তাহলে যোগাযোগ মাধ্যমে নিরাপত্তা কোথায়? ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মন্দবাগ নামক স্থানে দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় ব্যাপক হতাহতের খবর আসছে। গত সোমবার দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে উপজেলার মন্দবাগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা ও সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন দুটির মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় একটি ট্রেনের একাধিক বগি আরেকটি ট্রেনের কয়েকটি বগির ওপর উঠে যায় বলে আমরা জানতে পারি।
স্টেশন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র সংবাদ মাধ্যমকে জানায়, তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের চালক সিগন্যাল (সংকেত) অমান্য করায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মন্দবাগ রেলস্টেশনে দাঁড়ানোর জন্য চালককে সিগন্যাল দেয়া হয়। ওই সিগন্যালে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস প্রধান লেন থেকে ১ নম্বর লাইনে যেতে শুরু করে। ট্রেনটির ছয়টি বগি ১ নম্বর লাইনে উঠতে পেরেছিল। অন্য বগিগুলো প্রধান লেনে থাকা অবস্থায় তূর্ণা নিশীথা সিগন্যাল অমান্য করে। এতে তূর্ণা নিশীথার একাধিক বগি ওই ট্রেনের কয়েকটি বগির ওপর উঠে যায়। এতে উদয়নের তিনটি বগি দুমড়েমুচড়ে যায়। দুর্ঘটনায় প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী গতকাল পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, নিহতদের সবাই উদয়নের যাত্রী ছিলেন। আহত হয়েছেন শতাধিক যাত্রী।
দুই ট্রেনের সংঘর্ষে নিহতের পরিবারকে ১ লাখ ও আহত ব্যক্তিদেরকে ১০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। রেলওয়ে সম্পূর্ণ সরকারের নিয়ন্ত্রণে। এ দুর্ঘটনার দায়ভারও সরকারের নিতে হবে। সেক্ষেত্রে সংসারের কোন কর্তাজনের বা একমাত্র নির্ভরশীল কারো মৃত্যু হয়ে থাকলে, তার পরিবারের জন্য মাত্র ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ কতটুকু যুক্তিযুক্ত? এ ছাড়া যারা আহত হয়েছেন, কেউ হয়তো চিরজীবনের তরে পঙ্গু হয়ে থাকবেন, তাদেরকে ১০ হাজার টাকা দেয়া তামাশা বলে আমরা মনে করছি। তদন্ত কমিটি গঠনের ব্যাপারে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে চালক সিগন্যাল অমান্য করায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। তারপরও আমরা রেল মন্ত্রণালয় থেকে তিনটি, রেলওয়ে থেকে একটি এবং জনপ্রশাসন থেকে একটি করে মোট পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।’
আমরা আশা করি, দূর্ঘটনার বিষেয় সঠিক তদন্ত, জড়িতদের দ্রুত শাস্তি, আহত ও নিহতদের যথাযথ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে রেলওয়ের সিগন্যাল প্রক্রিয়া উন্নয়নে ব্যবস্থা নেয়া হবে, যাতে এ ধরণের মর্মান্তিক ও দুঃখজনক ঘটনা আর না ঘটে।