দেশের নতুন সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কার্যকরের পর দেশের বিভিন্ন জেলায় বাস চলাচল বন্ধের পর এবার সারাদেশে ট্রাক ধর্মঘটের ডাক এসেছে। নতুন সড়ক পরিবহন আইনের ‘সংস্কার’-এর দাবিতে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় হঠাৎ করে ধর্মঘট ও কর্মবিরতি শুরু করেছে পরিবহন শ্রমিকেরা। এই ধর্মঘট ও কর্মবিরতি এমন এক দিনে শুরু হলো, যেদিন থেকে সরকার আনুষ্ঠানকিভাবে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ প্রয়োগ করতে শুরু করেছে।
তবে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে যত চাপই আসুক, এই আইন অকার্যকর করা যাবে না।
আইনটি প্রয়োগে সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বা বিআরটিএ।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ট্রাক-কভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নতুন আইন স্থগিত রাখাসহ নয় দফা দাবিতে আগামীকাল বুধবার (২০ নভেম্বর) থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ডেকেছেন।
শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নের শুরু থেকে তার বিরোধিতা করে আসছিলেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) থেকে আইনটি কার্যকর শুরু পর কোনো চাপে পিছু হটবেন না বলে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেওয়ার পর পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা দৃশ্যত চাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) ঢাকার তেজগাঁওয়ে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাক মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. রুস্তম আলী খান বলেন, সড়ক পরিবহন আইন স্থগিত করে মালিক শ্রমিকদের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জরিমানার বিধান ও দণ্ড উল্লেখ করে একটি ‘যুগোপযোগী বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞান ভিত্তিক’ সঠিক আইন প্রণয়ন করতে হবে।
ট্রাক মালিক-শ্রমিকরা সড়ক পরিবহন আইন প্রত্যাখ্যান করছে কি না- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা পুরো আইন প্রত্যাখ্যান করছেন না। কিছু ধারার সংশোধন চান।
“আইনের সব ধারা নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। কিছু বিষয় নিয়ে আমরা বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়েছি। কিন্তু সরকার আশ্বস্ত করলেও পরে সেগুলো বাস্তবায়ন করেনি। এ কারণেই কর্মসূচি।”
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সদস্য সচিব তাজুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মকবুল আহমদ এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. মনিরসহ পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাক ধর্মঘট শুরু হলে পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে।
সড়ক পরিবহন আইন সংস্কারের দাবি তুলে শ্রমিকদের হঠাৎ এই ধর্মঘট-কর্মবিরতি। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার (১৯ নভেম্বর) ঢাকায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, কোন মহলের চাপের মুখে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন ‘অকার্যকর’ করা যাবে না।
উল্লেখ্য, নভেম্বর মাসের প্রথমদিন থেকে আইনটি কার্যকর করা হয়। তবে পিছিয়ে দেয়া হয় এর প্রয়োগ।
এর আগে, ২০১৮ সালের ২৯শে জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে দুই বাসের প্রতিযোগিতায় কারণে দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার অভিযোগ ওঠার পর শিক্ষার্থীরা দেশজুড়ে বিক্ষোভ করে। এই বিক্ষোভের কিছুদিন পরেই সংসদে সড়ক পরিবহন আইন পাস হয়।
মূলত, এ আইন কাউকে শাস্তি দিতে নয়, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং দুর্ঘটনা কমাতে ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার।